দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে নিহত ১১

দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, সুনামগঞ্জে একজন, হবিগঞ্জে একজন ও ও নেত্রকোণায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড়ের মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

খবর সংযোগের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুমিল্লা
কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগর উপজেলায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ চার জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে পৃথক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু-এমং মারমা মং বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

নিহতরা হলেন- বরুড়া উপজেলার পয়ালগচ্ছ গ্রামের ফাহাদ হোসেন (১৩), একই গ্রামের সায়মন হোসেন (১৩)। তারা বড়হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। এছাড়া মুরাদনগর উপজেলার কোরবানপুর গ্রামের নিখিল দেবনাথ (৬৪) ও দেওড়া গ্রামের জুয়েল ভুঁইয়া (৩০)। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে বরুড়া উপজেলা পয়ালগাছা গ্রামে শিশুরা মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। 

এদিকে, কুমিল্লার মুরাদনগরে বাঙ্গরা বাজার এলাকায় জমি থেকে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে ৩ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে ও দুপুরে আকস্মিক বজ্রপাতে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। 

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় এক নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অষ্টগ্রামে ইন্দ্রজিত দাস (৩০) ও স্বাধীন মিয়া (১৪) নামে দুইজন এবং মিঠামইনে ফুলেছা বেগম (৬০) নামে একজন নারী নিহত হয়েছেন।

অষ্টগ্রামে হাওরে বোরো ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ইন্দ্রজিত দাস ও স্বাধীন মিয়া নিহত হয়। অন্যদিকে মিঠামইনে বাড়ির পাশে ধানের খলায় কাজ করার সময় ফুলেছা বেগম নিহত হন। সোমবার সকালে বজ্রপাতে এসব প্রাণহানির ঘটনাটি ঘটে।

নিহতদের মধ্যে ইন্দ্রজিত দাস অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ্র দাসের ছেলে, স্বাধীন মিয়া একই উপজেলার খয়েরপুর আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিছ মিয়ার ছেলে এবং ফুলেছা বেগম মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ গ্রামের মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী।

অষ্টগ্রাম থানার ওসি রুহুল আমিন জানান, সোমবার সকালে হালালপুর গ্রামের পাশে হাওরে ইন্দ্রজিত দাস ধান কাটছিলেন। এ সময় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এছাড়া একই সময়ে খয়েরপুরের হাওরে ধান কাটার সময়ে বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই স্বাধীন মিয়া মারা যান।

মিঠামইন থানার এসআই অর্পণ বিশ্বাস জানান, সোমবার সকালে রানীগঞ্জ গ্রামে বাড়ির পাশে ধানের খোলায় কাজ করার সময়ে বজ্রপাতের ঘটনায় ফুলেছা বেগম মারা যান।

নেত্রকোণা
নেত্রকোণার কলমাকান্দায় আকস্মিক বজ্রপাতে দিদারুল ইসলাম নামে কওমি মাদরাসার এক শিক্ষক ও মদন উপজেলায় আরাফাত মিয়া নামে এক মাদরাসার ছাত্র (১০) মারা গেছেন।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে নিজ বাড়ির সামনেই বজ্রপাতে মৃত্যু হয় আরাফাত মিয়ার। সে উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে।

অপরদিকে কলমাকান্দা থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, রোববার দিবাগত রাত ১০টার দিকে আকস্মিক বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হোন মাদরাসা শিক্ষক দিদারুল। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং এর হাওরে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে ঝড়বৃষ্টির সময় এই ঘটনা ঘটে।

জেলার ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান জানান, সোমবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালবাসী দাসশর ছেলে দূর্বাসা দাশ (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহত হয় তার ভাই ভূষণ দাশ (৩৪) ও বোন সুধন্য দাশ (২৮)।

এছাড়াও বজ্রপাতে বানিয়াচং উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩) আহত হয়।

সুনামগঞ্জ
শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।  সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এই ঘটনা ঘটে।

রিমন তালুকদার উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও শাল্লা ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে গ্রামের পাশে বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান রিমন তালুকদার। এক পর্যায়ে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। রিমন তালুকদার নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগেই বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় একটি গরুও বজ্রপাতে মারা যায়।

শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।