চুয়াডাঙ্গায় তৈরি হয়েছে ব্যতিক্রমী এক ‘আবাসিক হোটেল’। এটি মানুষের জন্য নয় বরং এই আবাসিক হোটেল নির্মাণ করা হয়েছে গরু-ছাগলের জন্য। হোটেলে ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রতিটি গরুর আবাসন ফি ৫০০ টাকা। হোটেলে রয়েছে চেক-ইন, চেক-আউট, গোসল, দিনে চার বেলা খাবার, এমনকি খোলা পরিবেশে ঘোরাফেরার সুব্যবস্থা।
‘আরিফ গবাদিপশু হোটেল কাম ওয়্যারহাউস’ নামের এই অভিনব হোটেলটি গড়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি গরুর হাটের পাশে আমবাগানের ভেতর।
প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা আরিফুল ইসলাম একজন গরু ব্যবসায়ী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গরু কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত এবং হাটে আসা অন্যান্য ব্যাপারীদেরও সহযোগিতা করেন। গরু কেনার পর এক হাট থেকে অন্য হাটে যেতে গিয়ে যেসব ব্যাপারী গরু রেখে যাওয়ার উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পান না, মূলত তাদের সমস্যার সমাধান করতেই এই বিশেষ হোটেল।
হোটেলটি আপাতত ১৭টি গরু রাখার সক্ষমতা সম্পন্ন হলেও ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গরু রাখার স্থান প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। প্রতিটি গরুর জন্য নির্দিষ্ট খাবারের পাত্রে সর্বক্ষণ ঘাস-বিচালি রাখা থাকে। গরুর খাওয়া নির্ভর করে তার ইচ্ছার উপর চাহিদা অনুযায়ী সব সময় খাবার প্রস্তুত থাকে। পাশাপাশি কর্মীরা গরুকে গোসল করান এবং দিনে তিন-চার বেলা খাবার পরিবেশন করেন।
উদ্যোক্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, অনেকেই কোরবানির হাটে এসে একটি গরু কেনার পর আরেকটি কেনার আগে চিন্তায় পড়ে যান, যে আগের গরুটি রাখবেন কোথায়। তাদের কথা মাথায় রেখেই এই হোটেল চালু করেছি। হাটের কাছাকাছি হওয়ায় যারা একাধিক গরু কিনতে চান, তারা প্রথমে গরু হোটেলে রেখে নিশ্চিন্তে হাটে ঘুরে বাকি গরু কিনে নিতে পারছেন। মানুষের হোটেলের মতোই এখানে রয়েছে চেক-ইন ও চেক-আউট ব্যবস্থা। গরু হোটেলে প্রবেশের পর ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময়কে এক দিনের হিসেব ধরা হয়। খাওয়া-দাওয়া সম্পূর্ণ ‘বুফে’ পদ্ধতিতে। কেউ চাইলে ছাগল রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গরুর হোটেলটির পরিবেশ পরিচ্ছন্ন, নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত এবং যোগাযোগব্যবস্থাও সহজ। জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ থাকায় এখান থেকে দেশের যেকোনো প্রান্তে গরু পাঠানো সম্ভব।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন এই উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে আরও কক্ষ বা ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। হোটেলটি শিগগিরই সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. আ.হা.ম. শামিমুজ্জামান বলেন, এটি একটি অভিনব ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। গরু কেনাবেচায় আগ্রহী ব্যবসায়ীদের জন্য এটি অত্যন্ত সহায়ক। এখান থেকে গরু নিরাপদে রেখে ব্যবসায়ীরা আরাম করে কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারছেন। শুধু কোরবানির মৌসুম নয়, এই হোটেল সারা বছর খোলা থাকবে।