বিএনপির নেতা সান্টুর বেফাঁস মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল!

বেফাঁস মন্তব্য করে আবারও নেতিবাচকভাবে আলোচনায় এসেছেন বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা সরদার সরফুদ্দিন সান্টু। বিএনপি নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিতে উৎসাহিত করে তার একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

জানা গেছে, সান্টু বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য, উজিরপুর উপজেলা সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা কমিটির সদস্য। আওয়ামী লীগের প্রায় পুরো সময়ে তিনি বিদেশে ছিলেন এবং ৫ আগস্টের পর দেশে ফেরেন। তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখলের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় আধিপত্য নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ান সাণ্টু। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সভাতে বেফাঁস কথা বলে আলোচিত হচ্ছেন। 

একটি কর্মী সভায় সাণ্টুর বক্তব্যের ভিডিও গত কয়েকদিন ধরে জেলার বানারীপাড়া ও উজিরপুরে তাকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে।

বক্তব্যে তাকে বলতে শোনা যায়, গত এক বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা যে চাঁদাবাজি করেছে সেটা আমি তাদের করতে দিয়েছি। কারণ গত ১৭ বছর নেতাকর্মীরা কিছু খায়নি। অবস্থা কিন্তু ভালো না। আমি থাকি আর না থাকি, আপনারা এক থাকেন। দল ক্ষমতায় না এলে কিন্তু কিছু পাবেন না। নেতাকর্মীদের পকেটে যদি পয়সা না থাকে, সমস্যা হলে আমার কাছে আসেন। আর পকেটে যদি পয়সা থাকে তাহলে তো আর আসবেন না। তাই আমি চাই কর্মীরা ভালো থাকুক। 

দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত জুলাইতে বানারীপাড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এতে গঠিত নতুন কমিটির সঙ্গে মতনিবিনিময় সভায় সান্টু নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। এর ভিডিও শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়। 

ওই সভাতে উপস্থিত ছিলেন বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গোলাম মাহমুদ মাহবুব মাষ্টার। তিনি জানান, সভাটি হয়েছে উজিরপুরের গুঠিয়ায় সান্টুর বাইতুল ভিউ কনভেশন হলে। সভাতে সান্টু চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কথাগুলো বলেছেন। মুখ ফসকে এসব কথা বলেছেন বলে ধারণা তার। 

তবে বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মৃধা এ প্রসঙ্গে বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি। ওটি কোন সভার তা চিহিৃত করতে পারিনি। আমার ধারণা এটি কাট করে তৈরি করা হয়েছে। 

বরিশাল-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু নিশ্চিত করেন, কোন কাটপিস নয়, ভিডিওর পুরোটা দেখলে নিশ্চিত হওয়া যায় সান্টু এ বক্তব্য দিয়েছেন।

টিপু ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলেন, দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। তিনি (সান্টু) একের পর বেফাঁস কথা বলে দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছেন। দলের হাইকমান্ড নিশ্চিয়ই এসব বিষয় দেখবে। 

এ বিষয়ে জানতে সান্টুকে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

এর আগে গত ১৯ জুলই উজিরপুর ও ২০ জুলাই বানারীপাড়া উপজেলা এবং পৌর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ দুটি সম্মেলনে সান্টু বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দুই উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে জড়িয়ে বক্তব্য দেন। 

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার হাতে দল চালাতে ১০ লাখ টাকা দিয়ে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছি। ম্যাডাম কথা রেখেছেন, ৯৩ সালে ম্যাডামের সঙ্গে হেলিকপ্টারে আমি উজিরপুরে আসি, তার হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করি। ফালু (মোসাদ্দেক হোসেন ফালু) ভাই সব জানেন। 

এছাড়া সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলালের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তাকে নামিনেশন এনে দিয়ে ভোটে জেতাতে ৬ লাখ টাকা দিয়েছি। অইয়াই আমারে বাঁশ দেওয়া শুরু করছে। আমাকে মামলায় দিয়েছে’।

পাশাপাশি সরোয়ারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সেই দিন ভুইল্লা যান। আমারে আঙ্গুল দিয়েন না। আমি কিন্তু বরিশালে একবার ভোট করেছি, আবারও করে দেখাবো’।

তার এসব বেফাঁস বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার ও অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।