ভারত-বাংলাদেশে কারাভোগ

১৭ বছরেও মুক্তি মেলেনি নিরপরাধ বাদলের 

গত ১৭ বছর ধরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন বাদল ফরাজি। ভারতের কারাগারে ১৪ বছর কাটিয়ে দেশে ফিরে বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। আর ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনে চলছেন। 

ভুক্তভোগী বাদল ফরাজির বাড়ি বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের কাছে মোর্শেদ সড়ক এলাকায়। তিনি মৃত আবদুল খালেক ফরাজির ছেলে। তার মা শেফালি বেগম। তার মায়ের ইচ্ছা মৃত্যুর আগে ছেলেকে এক নজর দেখার।
 
জানা গেছে, ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান বাদল ফরাজি। স্বপ্ন ছিল তাজমহল দেখা। কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। ভারতে প্রবেশের পরপরই সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে আটক করে। ভারতীয় নাগরিক বাদল সিংয়ের নামে থাকা একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ সেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ২০০৮ সালের ৬ মে যখন বাদল ফরাজি বাংলাদেশেই ছিলেন।

ভারতের আদালত ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। দিল্লির সাকেত আদালত এই রায় ঘোষণা করে। 

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে হত্যা করা হয় এবং সেই মামলায় বাদল ফরাজিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরে দিল্লি হাইকোর্টে আপিল করা হলেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে। ফলে তিনি ভারতের তিহার কারাগারে বন্দি জীবন কাটাতে বাধ্য হন।

প্রায় ১০ বছর সাত মাস তিহার কারাগারে থাকার পর ২০১৮ সালের ৭ জুলাই বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় বাদল ফরাজিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রথমে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে রাখা হলেও ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

কারাগার সূত্র জানায়, বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে মুক্তি দিতে হলে রায় ঘোষণাকারী আদালতের অনুমোদন নিতে হয়। এ কারণে বাদল ফরাজির সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ভারতীয় সরকারের অনুমোদনের জন্য অন্তত পাঁচবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ভারত থেকে কোনো উত্তর আসেনি।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাদল ফরাজি আমাদের এখানে আসার পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি জানতে পারেন এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। আমরাও চিঠি দিয়েছি। সরকারের নির্দেশনা পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাফিসা আরেফিন কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনকালে কারা কর্তৃপক্ষ বাদল ফরাজির বিষয়টি নজরে আনেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত আছি এবং নিয়ম মাফিক ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তবে যেহেতু ভারতীয় আদালতের রায়ের অনুমোদন প্রয়োজন, তাই বিষয়টি কূটনৈতিকভাবেও সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাদলের বোন আকলিমা খাতুন বলেন, আমার ভাই নিরপরাধ। তারপরও তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। ভাইয়ের শোকে বাবা মারা গেছেন, মা এখন বিছানায় পড়ে আছেন। মায়ের শেষ ইচ্ছা, মৃত্যুর আগে ছেলের মুখ দেখা। আমরা আশা করি সরকার আমার নিরপরাধ ভাইয়ের মুক্তির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।