নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ, বেত ও মোতরা দিয়ে তৈরি আসবাবপত্রের ব্যবহার। গুটি কয়েক পরিবার পৈত্রিক পেশা হিসেবে এ শিল্পটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করলেও এসব জিনিসের ব্যবহার কমে যাওয়ায় এগুলো আগের মতো এখন আর মানুষকে টানছে না।
ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শিল্পীরা এবং বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা। ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে এসব দ্রব্যে তৈরি করা কুটির শিল্পীটি।
উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা কুটির শিল্পের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিল। এর মধ্যে আড়াইহাজারের প্রাণকেন্দ্রে পাইট্টালপাড়া নামে একটি পাড়া ছিল। যেখানে মোতরা ও বাঁশ দিয়ে তৈরি হতো হাজার হাজার পাটি, নকশি করা পাটি, বাঁশের চাটাই ও অন্যান্য নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদী। ৮০’র দশকে এ পাড়া থেকে অধিবাসীদের অন্যান্য স্থানে পুনর্বাসিত করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে আড়াইহাজার উপজেলা কোর্ট ভবন। পরে উপজেলা পর্যায়ে কোর্টের কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে স্থানান্তর করার পর বর্তমানে এটি উপজেলা ভূমি অফিস ও আড়াইহাজার সাবরেজিষ্ট্রি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এর আশে পাশে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন সরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন। আর এখান থেকে যাদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে, তারা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসবাস করলেও বাঁশ, বেত ও মোতরা শিল্পের কাজ প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন এবং অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন।
উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বাগাদী এলাকায় বাঁশ দিয়ে পাতি, কুলা, ঝুকনি, ধানের গোলা, পলো, খাঁচা ইত্যাদি নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য তৈরি করা হতো। এখানে ছৈয়ল বাড়ি নামে একটি পাড়া বিশেষ পরিচিত ছিল। বর্তমানে ওই সব ছৈয়লেরা আর জীবিত নেই। তাদের বংশধররা এ কাজ প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণপাড়া নামে একটি পাড়া রয়েছে। এখানেও তৈরি হতো এসব শিল্প সামগ্রী। এখন এ পাড়ায়ও কেউ আর এ সব জিনিসপত্র তৈরি করে বলে শোনা যায় না।
তবে উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের পাঁচগাঁও এলাকায় প্রায় শতাধিক হিন্দু পরিবার মোতরার পাটি তৈরির কাজ করেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে শিবল চন্দ্র দে, কানু চন্দ্র দে, শান্তি চন্দ্র দে, মন্টু চন্দ্র দে এবং জীবন চন্দ্র দে জানান, পৈত্রিক পেশা কোনো রকমে ধরে রাখলেও এখন রুচিশীল মানুষ-খাট পালঙ্কে ফোমের মেট, রঙ-বেরঙের বেডশিট ব্যবহার করায় পাটির চাহিদা অনেকটা কমে গেছে।
এছাড়া উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রত্নগরদী গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক হিন্দু পরিবার বাঁশ, বেত ও প্লাস্টিকের রশি ও ফিতা দিয়ে বসার মোড়া তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা জানান, প্লাস্টিকের চেয়ার ও মোড়ার প্রচলন হওয়ায় তাদেরও ব্যবসায় বর্তমানে ভাটা পড়ে যাচ্ছে। তাই তারা অন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করার চেষ্টা করছেন। তবে পৈত্রিক পেশা একেবারে ছেড়ে দিয়ে নয়। যেকোনভাবে পরিবারের কেউ না কেউ পৈত্রিক এ পেশা আঁকড়ে ধরে রাখবেন বলেও তারা জানান।
আড়াইহাজার উপজেলা পর্যায়ে কুটির শিল্প বিষয়ক কোন অফিস না থাকায় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।