দীর্ঘ ৫ দশক পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ক্রীড়াঙ্গনকে উজ্জীতি করতে মিনি স্টেডিয়ামকে সংস্কার করে নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। তরুণ ও যুব সমাজকে খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনতে উপজেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ।
অবহেলিত ও নিচু মিনি স্টেডিয়ামে মাটি ফেলা, ঘাষ লাগানোসহ বিভিন্ন সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় তরুণ ও যুব সমাজ, অভিবাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক শরীফা হকের নির্দেশনায় মিনি স্টেডিয়ামের সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা আইসিটি ও উন্নয়ন) সঞ্চয় কুমার মহন্ত এবং টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শিহাব রায়হানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, বিশাল এলাকা ও মনোরম পরিবেশে ১৯৭৯ সালে মির্জাপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ভবন ও খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে টাঙ্গাইলের তৎকালিন জেলা প্রশাসক মো. মোবাইদুল ইসলাম এর ভিত্তিপ্রস্তর করে ছিলেন। প্রায় ৫ দশক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রীড়া সংস্থার ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যাক্ত ছিল। খেলার মাঠের অবস্থা আরও করুণ ছিল।
২০১৮ সালে এই খেলার মাঠের নামকরণ করা হয় ‘মির্জাপুর মিনি স্টেডিয়াম’। এই মিনি স্টেডিয়ামে ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ সরকারি সব ধরনের জাতীয় অনুষ্ঠান পালিত হলেও মিনি স্টেডিয়ামের উন্নয়নের ছোয়া পরেনি। মির্জাপুর শহর ও ঢাকা-টাঙ্গাইল পুরাতন মহাসড়ক থেকে মিনি স্টেডিয়ামটি নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এদিকে কুমুদিনী কর্তৃপক্ষ খেলার মাঠটির দুইপাশ নিজেদের দাবি করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. একাব্বর হোসেনের প্রচেষ্টায় এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগীসহ ক্রীড়ামোদি যুব সমাজের সহায়তায় মাঠটি উদ্ধার হয়। পরে সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ মিনি স্টেডিয়ামের মাটি ভরাটের ব্যবস্থা করে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেন। অর্থের অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এলাকার তরুণ ও যুব সমাজ মিনি স্টেডিয়ামে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয়।
এলাকাবাসী, স্থানীয় ক্ষুদে খেলোয়াড়, তরুণ ও যুব সমাজের আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছর মির্জাপুর উপজেলা প্রশাসন মিনি স্টেডিয়ামকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম আরিফুল ইসলাম এলাকার তরুণ ও যুব সমাজ, গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, অভিভাবক, বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের নেতাসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে মিনি স্টেডিয়ামের সংস্কারের উদ্যোগ নেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় মিনি স্টেডিয়ামে মাটি ফেলার কাজ শেষ করে ঘাস লাগিয়ে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।
এলাকার তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে খন্দকার রাকিবুল হাসান রিপন, প্রতিক হাসান, আরাফাত রহমান রাজিব, ইমরান হোসেন ইমন ও রনি হাসান জানায়, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে মির্জাপুর মিনি স্টেডিয়াম সংস্কারসহ ঘাস রোপণ করে খেলাধুলার উপযোগী করেছেন। এখন এখানে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানসহ ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন লীগ খেলাধুলার আয়োজন করা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দীর্ঘ দিন মির্জাপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ভবন ও মিনি স্টেডিয়াম অবহেলিত ছিল। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে মিনি স্টেডিয়ামে মাটি ফেলা, ঘাস লাগানো, গোলপোস্ট স্থাপন, বাউন্ডারি, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ মাঠকে খেলাধুলার উপযোগী করে তুলতে সব ধরনের কাজ করা হচ্ছে। তরুণ ও যুব সমাজ যাতে নিয়মিত মাঠে খেলাধুলা করতে পারে, সে জন্য ক্রিকেট সেট, ফুটবল, ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলার সামগ্রী বিবরণ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্রিকেট, ফুটবল ও ভলিবলের লীগ খেলা শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, মিনি স্টেডিয়ামকে খেলাধুলার জন্য গড়ে তুলতে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা আইসিটি ও উন্নয়ন) সঞ্চয় কুমার মহন্ত, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শিহাব রায়হানসহ এলাকার সব শ্রেণি-পেশার লোকজন সহায়তা করছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অর্থ পেলে ক্রীড়া সংস্থার ভবন নির্মাণসহ মিনি স্টেডিয়ামের আরও উন্নয়ন করা যাবে।