রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে দীর্ঘশ্বাস, নেই ঈদ আনন্দ

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে খুলনা উপকূলবাসী এখনও আতঙ্কিত। নানা প্রতিবন্ধকতায় ক্ষতিগ্রস্ত তারা। এরমধ্যে পবিত্র ঈদুল আজহা চলে আসলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে নেই কোনো ঈদের আনন্দ।

খুলনার উপকূলের সবখানেই প্রায় একই চিত্র। দিনে অন্তত একবার খাবারের চিন্তায় ব্যাকুল পরিবারগুলোর কাছে নেই কোনো ঈদের আনন্দ। ঈদে সেমাই, পায়েসও খাওয়া হবে না অনেক পরিবারের সদস্যদের। কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের তানিয়া খাতুন, নাজমা বেগম, শহিদুল্যাহ গাজীসহ আরও অনেকেই বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবলীলায় তাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। তাদের এখন রয়েছে শুধু দীর্ঘশ্বাস আর হাহাকার।

ওই গ্রামের বাসিন্দা আফছার উদ্দীন। বয়সের ভারে ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় চলতে ফিরতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর। তবুও পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে রোজ জীবিকা নির্বাহে খেটে যাচ্ছেন তিনি।

দৈনিক খবর সংযোগের কথা হয় আফছার উদ্দীনের সঙ্গে। তিনি জানান, কী আর করব, সবসময় নদীর ভাঙাগড়ার মধ্যে বসবাস করতে হয়। নোনাজলে বিলীন করে দিয়েছে জমিজমা, ঘরবাড়ি। সবই তো ভাইস্যা গেছে। শুধু ঘরখানই দাঁড়াই আছে। নদীতে জোয়ার আসলে সব সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়তে হয়।

শুধু আফছার উদ্দীন নন, এরমধ্যে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সংগ্রাম করছেন তাঁর মতো উপকূলের আরও বাসিন্দাগণ। রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই গ্রামের ৬০ পরিবারের সদস্যরা। তাদের অনেক কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কপোতাক্ষের নোনাজলে। অনেকের বাড়িতে রাখা ধান ছিল। রিমালের দিন জলোচ্ছাস শুরু হওয়ার সময় কিছু জিনিসপত্র সরাতে পারলেও ধান, কাপড় চোপড়, এমনকি হাড়ি কড়া, থালাবাটি সব হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব এখন। কপোতাক্ষ নদীর তীরে এই দশালিয়া গ্রামের সব’কটি ঘরেই এখন জলোচ্ছাসের ক্ষতচিহ্ন। এখানে এমন কোনো ঘর নেই, যা ঘূর্ণিঝড়ের রাতে প্লাবিত হয়নি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে অনেকের ঘরবাড়ি।

স্থানীয় ইউনিয়ন সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, উপকূলীয় অঞ্চল দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। প্রতি বছরই ঝড়ের তাণ্ডব মোকাবিলা করতে হয় এ দশালিয়া বেড়িবাঁধ তীরে বসবাস করা শত শত মানুষকে। দুর্যোগ- দুর্বিপাক এখানকার মানুষের নিয়তির ওপর ভর করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। ঝড়ের মৌসুমে নদী পাড়ের একদিকে ঝড়ের প্রকোপ, অন্যদিকে উত্তাল নদী হয়ে ওঠে অগ্নিমূর্তি। সৃষ্টিকর্তার নাম ডাকা ছাড়া নদী পাড়ের মানুষের আর কোনো উপায় থাকে না।

মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্যাহ আল মাহমুদ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো টেকসই করা না হলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে উপকূলবাসীকে। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারের দাবি জানান।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন, রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।