আকাশজুড়ে সাদা মেঘের আনাগোনা। সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে ছুটে আসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৪০ হাজারের উপর পূজামণ্ডপ তৈরি হয়। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় উৎসব।
দশমির দিন বিসর্জনের জন্য প্রতিমা বসানো হয় ষষ্ঠীর দিন অর্থাৎ ৪ দিন প্রতিমা পূজামণ্ডপ থাকে। কিন্তু সেই মহাযজ্ঞ শুরু হয়ে যায় ৪ মাস আগে খুব ঘটা করে।
রথ যাত্রার প্রথম দিন প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করতে হয়। এটাই ঐতিহ্য। সঙ্গে প্রতিমা তৈরির শুরুতে প্রতিমাদের উদ্দেশ্যে পূজা দেওয়ার রীতি রয়েছে। এই আনুষ্ঠনিকতার পর কাজ শুরু হয়।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর, বাংলা ১৩ আশ্বিন থেকে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হবে। তাই ঝিনাইদহ জেলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারুশিল্পীরা।
জেলা শহরের পবহাটি বাবুপাড়া পূজা মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ পার্থ বসু জানান, আসন্ন দূর্গাপুজায় সদর উপজেলায় ১০৯টি, কালীগঞ্জে ১০১টি, কোটচাঁদপুরে ৪৬টি, শৈলকুপায় ১২৫টি, হরিণাকুন্ডুতে ২৭টি ও মহেশপুর উপজেলায় ৪৭টিসহ জেলার ৬টি উপজেলার ৪৫৫টি মণ্ডপে দূর্গাপুজার আয়োজন করা হয়েছে।
শারদীয়া উৎসবের আরও ৩ দিন বাকি থাকলেও শিল্পীরা প্রতিমা গড়ার কাজে এগিয়ে চলেছেন। জেলা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় উৎসবের আমেজ অগ্রিম বইতে শুরু করছে। স্থানীয় কারীগর ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা তৈরি করতে তারা এক প্রান্ত থেকে দেশের আরএক প্রান্তে চলে আসেন।
কারুশিল্পীরা প্রতিমা তৈরি করতে প্রথমে বাঁশ, খড়, মাটি, কাঠ, সুতা ব্যবহার করেন। তারপর শুকানোর পর রঙ দিয়ে আধুনিক রূপে রূপায়িত করে তোলেন। উৎসবের জন্য মণ্ডপে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী, সরস্বতী, দুর্গা, সর্প, মহিষ, সিংহসহ নানা ধরণের আকর্ষণীয় প্রতিমা তৈরি করে থাকেন মণ্ডপে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারে সার্বজনীন পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করতে এসেছেন নিল কমল বিশ্বাস, অভিকেষ, সুদীপ্ত কুমার, অমল বিশ্বাস। তারা ৬টি প্রতিমার কাজ এ বছর হাতে নিয়েছেন।
নিল কমল বিশ্বাস জানান, বাপ-দাদার পেশার কাজ করতে যেয়ে আজ এ পেশায় আমরা জড়িয়ে পড়েছি। বছরে বাকি সময়গুলো বিশ্বকর্মা, লক্ষী, স্বরসতী, গণেশসহ অর্ডারের কাজ করে থাকে। কিন্তু এ মৌসুমে বড় পূজার কাজ তৈরি করতে তাদের রাতদিন কাজ করতে হচ্ছে। একটু খাবারের সময় পর্যন্তও পাচ্ছে না। দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে তারা এ বছর ৩০-৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।
ঝিনাইদহ রমজান ডেকোরেটর মালিক রমজান আলী জানান, শারদীয়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে আধুনিক আলোকসজ্জার জন্য তাদের অগ্রিম ডেকোরেটরের কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি পূজার ডেকোরেটরের জন্য ৪০-৫০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাক-ঢোল বাজনাদের চাহিদা বেড়ে গেছে।
বিষয়খালী বাজার পুজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অবনিশ কুমার ভৌমিক জানান এ বছর ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলার ৪৫৫টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় উৎসব উদ্যাপিত হবে।
তবে গতবছরের চেয়ে এবার বেশি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। আমাদের বাজারের মন্দিরের মোট খরচ ধরা হয়েছে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্য্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয় যে, আসন্ন দূর্গাপুজায় সদর উপজেলায় ১০৯টি, কালীগঞ্জে ১০১টি, কোটচাঁদপুরে ৪৬টি, শৈলকুপায় ১২৫টি, হরিণাকুন্ডুতে ২৭টি ও মহেশপুর উপজেলায় ৪৭টি মন্ডপে দূর্গাপুজার আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, জেলার ৬টি উপজেলার ৪৫৫টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জানমালের নিরপত্তার জন্য র্যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাসহ স্থানীয়দের সার্বিক সহযোগিতায় সতর্ক অবস্থায় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও সাদা পোশাকে বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীরা মাঠে কাজ করবে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পূজার জন্য র্যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবিসহ স্থানীয়দের সার্বিক সহযোগিতায় সর্বাত্মক সতর্ক অবস্থায় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিয়োজিত থাকবেন।