ঝিনাইদহে বিরল ভালোবাসার উপাখ্যান 'মোটরসাইকেল বর'

প্রেম, তারুণ্য ও সাহসিকতার এক সম্মিলিত গাঁথায় সম্প্রতি মূর্ত হলো ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ড উপজেলা। চিরায়ত প্রথা ও জাঁকজমকপূর্ণ গাড়ির কৃত্রিমতা ছেড়ে বর সেলিম হোসেন তার জীবনসঙ্গিনীকে বরণ করে নিলেন এক স্বকীয় ও আন্তরিক ভঙ্গিতে—প্রিয় মোটরসাইকেলে চড়িয়ে।

ব্যতিক্রমী এই ঘটনাটি কেবল স্থানীয়ভাবেই আলোচনাতে নয়, বরং নবীন প্রজন্মের কাছে এক নতুন প্রেমের সংজ্ঞায়নে পরিণত হয়েছে। যেখানে এক হলো শৈলকুপা ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা। 

সেলিম হোসেন যখন তার স্বপ্নপূরণের সারথি, নববধূ মৌ খাতুনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে কনের গ্রাম থেকে নিজ গৃহাভিমুখে যাত্রা শুরু করেন, দৃশ্যটি হয়ে ওঠে দুই উপজেলার মানুষের কাছে এক আনন্দময় উপহার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) এই বরযাত্রার শুরু থেকেই এক অভূতপূর্ব উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয় এলাকাজুড়ে। বরযাত্রীর মোটরসাইকেলের বহর যখন গ্রামের কাঁচা-পাকা পথ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন শত শত উৎসুক জনতা রাস্তার দুইপাশে ভিড় করে। অনেকেই সেই আনন্দের বহর মোবাইলের ক্যামেরায় ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

পারভেজ মোশাররফ নামের এক যুবক জানান, মোটরসাইকেলে বরযাত্রা—আমাদের এলাকায় এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখিনি। এই বরের সাহসিকতা আর ব্যতিক্রমী ভাবনা দেখে আমরা সবাই উচ্ছ্বসিত। এই বিয়ে আমাদের এলাকার জন্য এক নতুন বার্তা নিয়ে এলো, মন্তব্য করেন বরযাত্রী দলের সদস্য ওবাইদুর রহমান।

বিয়ের সকল শাস্ত্রীয় পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পর, যখন বিদায়ের বিষাদমাখা সুর ভেসে আসে, তখনই ব্যতিক্রমী দৃশ্যের সূচনা। অন্য কোনো গাড়ির ভরসা না রেখে, বর সেলিম হোসেন নিজেই মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেল ধরেন। আর পেছনে বসে লাজুক নববধূ মৌ খাতুন।

এই যাত্রা যেন ছিল কেবল একটি যান্ত্রিক যাত্রা নয়, বরং দুইজন স্বপ্নচারীর হাতে হাত রেখে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলার এক দৃঢ় অঙ্গীকার। প্রতিটি হর্ন যেন ছিল এই নবদম্পতির জন্য জনতা কর্তৃক উচ্চারিত শুভাশীষের প্রতিধ্বনি।

তরুণ সেলিম ও মৌয়ের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ প্রমাণ করে, ভালোবাসা তার পথ খুঁজে নেয় যেকোনো প্রথা ভেঙে। এই ঘটনা কেবল ঝিনাইদহের বুকে নয়, বরং পুরো দেশের সামাজিক পটভূমিতে এক চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।