অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা

গতবছর আলু চাষ করে লোকসান গুনেছেন নওগাঁর কৃষকরা। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে এবার আগাম আলু চাষ করেন তারা। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমেছে। এতে আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। 
 
আগাম আলু বপণ করা জমিতে পানি জমায় বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও কোথাও প্রস্তুত করা হয়েছিল জমি, কোথাও সদ্য রোপণ করা হয়েছে বীজ। বৃষ্টিতে সেই জমিতে জমেছে পানি। ফসল বাঁচাতে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। শুধু আলু খেত নয়, আগাম জাতের শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির গাছও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যেসব খেতের সবজি এখনো ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকেরা। এছাড়া মাঠের আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আলুর ভালো দাম না পাওয়ায় এ বছর লাভের আশায় আগাম আলু চাষ করেন কৃষকরা। তবে বৃষ্টি হওয়ায় আলুর জমিতে পানি জমে। বৃষ্টির পানিতে রোপণ করা বীজ পচে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। অন্যদিকে অনাবাদী জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর বীজ রোপণ কবে করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। শীতকালীন শাক-সবজির জমিতেও দেখা দিয়েছে শিকড় পচে যাওয়া। পানি দ্রুত না সরলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকেরা।

আত্রাই উপজেলা কালিকাপুর ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক জয়নাল জানান, গতবছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে। ভাবলাম একটু আগাম আলু লাগালে ভালো দাম পাওয়া যাবে। সেই আশায় দেড় বিঘা জমিতে আলু বীজ রোপণ করে এক সপ্তাহ হয়নি। এর মধ্যে বৃষ্টি। এখন বৃষ্টির পানি জমে থাকায় গাছ ঠিকমতো উঠতে পারে, নাও পারে। কি করব ভেবে পাচ্ছি না।
মান্দা উপজেলার ভারশো এলাকার কৃষক আশরাফ হোসেন বলেন, আগাম আলু চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। এলাকার কয়েকজনকে আলু লাগাতে দেখে আমিও এক বিঘা জমিতে কয়েকদিন আগে লাগালাম। কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় আলুর জমিতে পানি জমে। এতে রোপণকৃত বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

সদর উপজেলা বর্ষাইল এলাকার কৃষক রতন মোল্লা বলেন, সবেমাত্র কিছুদিন আগে আলুর বীজ রোপণ করেছি। এরই মধ্যে বৃষ্টি। এখনও মাঝে মাঝে মেঘে ঢেকে আসছে। ঝিরঝির করে বৃষ্টিও পড়ছে। মাটির নিচে রোপণ করা আলুর বীজ একটু পানি পেলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ক্ষেতের অধিকাংশ আলু পচে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
 

হাপানিয়া এলাকার সুশীল মিস্ত্রি বলেন, ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমন ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে গেছে। এখনো ফসলের খেতের অনেক পানি জমে রয়েছে। দ্রুত পানি সরাতে না পারলে অনেক ক্ষতি হবে।

কীর্ত্তিপুর এলাকার সবজি চাষি ইন্দ্রি মিয়া বলেন, কয়েকদিন ধরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজির গাছের গোড়ায় পচন দেখা দিয়েছে। অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকরা খরচের টাকাও তুলতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হোমায়রা মন্ডল বলেন, বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। যেসব জমিতে আলু লাগিয়ে ৮-১০ দিন হয়েছে সেগুলোর ক্ষতি হবে না। এছাড়া শীতকালীন সবজি ও ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। ধানের জন্য বৃষ্টি কিছুটা আর্শীবাদ। পানি সরে গেলে কোন সমস্যা হবে না।