দু’দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি সংরক্ষণাগারের নির্মাণকাজ

আলুবীজ উৎপাদনে দেশে যে কয়েকটি জেলা এগিয়ে তার মধ্যে অন্যতম রংপুর। তবে বিভাগে বীজ সংরক্ষণে যে হিমাগারটি রয়েছে, তাতে চাহিদা অনুযায়ী আলু রাখা যায় না। এ কারণে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও কৃষক পর্যায়ে তা বিতরণের জন্য রংপুরে আরও একটি আলুবীজ সংরক্ষণার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পর পর দুই দফায় সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আলুবীজ সংরক্ষণাগারের নির্মাণকাজ।  

আলুবীজ সরবরাহকারী কৃষকরা বলেন, নির্ধারিত সময়ের পরও দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অথচ হিমাগার ভবনের সার্বিক নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। কবে নাগাদ হিমাগারটির নির্মাণ শেষ হবে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছে না। নির্মাণকাজের অগ্রগতি তেমন না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ তারা।

বিএডিসি (নির্মাণ) পুর অঞ্চল সূত্র জানায়, মানসম্পন্ন আলুবীজ উৎপাদন,সংরক্ষণ ও কৃষক পর্যায়ে তা বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের অধীন হিমাগারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৯৯ দশমিক ৩০৬ টাকা। দুই হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আলুবীজ হিমাগার নির্মাণকাজ পায় ইকম-ইইএল জেভি নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর কার্যাদেশ পেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে ২০২২ সালের ১৭ জুন। কাজ শেষ করার ৪৫০ দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়।

নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। তবে নির্ধারিত সময়ে হিমাগার নির্মাণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রথম দফায় তিন মাস সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। উল্লিখিত সময়েও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় ৯ মাসেরও বেশি সময় বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। বরাবরের মতো এবারও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

সরেজমিনে রংপুর বিসিক শিল্প নগরীতে নির্মাণাধীন হিমাগারে দেখা গেছে, তাতে কিছু বিম ফাঁকা রেখে ভবনের বাকি ভিমের ওপর ছাদের শাটারিং করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো.আব্দুল হালিম বলেন, নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ায় সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। তবে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি।

বিএডিসি ডিলার রংপুর আঞ্চলিক কমিটির সহ-সভাপতি ফিরোজ আলম বলেন,  এ অঞ্চলে ব্যাপক আলু চাষ হয়। কৃষকের কাছে বিএডিসির বীজের চাহিদা প্রচুর। কৃষকদের বিএডিসির নিজস্ব ডিলারদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। রংপুরে এক হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি মাত্র আলুবীজ হিমাগার রয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সব আলু রাখা সম্ভব হয় না।

ছবি: খবর সংযোগ

তিনি বলেন, ডিলাররা বাধ্য হয়ে মুন্সিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থেকে আলুবীজ সংগ্রহ করেন। রংপুর হিমাগার থেকে আলুবীজ নিতে ট্রাকে খরচ হয় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। অথচ পাকুন্দিয়া থেকে আলুবীজ আনতে খরচ হচ্ছে ১৬-১৮ হাজার টাকা। বাড়তি খরচ বহন করতে হয় ডিলারদের।

নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা বিএডিসি (নির্মাণ) রংপুর অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসউদুল করিম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে হিমাগারের কাজ শেষ করতে পারেনি। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু হিমাগারের সার্বিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি।

বিএডিসি আলুবীজ বিভাগের উপপরিচালক (মান নিয়ন্ত্রণ) আসাদুজ্জামান খান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি। ২০-২৫ দিন ধরে হিমাগার নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. আবীর হোসেন বলেন, প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর রয়েছে। আশা করছি পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে হিমাগার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। তাছাড়া কাজটি ২০১৮ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী হয়েছিল। বর্তমানে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে, এটি একটি কারণ। এর পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেও কাজটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধান হয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। হিমাগারের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।