মাদকের হাট গঙ্গাচড়া

হাত বাড়ালেই মিলছে ফেনসিডিল-ইয়াবা

মাদকের হাটে মাদকের পসরা সাজিয়ে বসে আছে কারবারি। আর হাত বাড়ালেই মিলছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা। এমন ভয়ংকর মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে একটি চিহ্নিত চক্র। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় বেপরোয়া মাদক কারবারিরা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এমন ভয়ংকর চক্র গড়ে উঠেছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নে তালপট্টি গ্রামে। এক নামে মাদকের গ্রাম নামে পরিচিত মাদকসেবীদের কাছে। এই মাদকচক্র দিনের পর দিন প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে পরিচালনা করছে তাদের মাদকের কারবার।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো চিহ্নিত এই মাদক চক্রের সদস্যরা একই পরিবারের তিন সহোদর ভাই। তারা হলেন, এরশাদুল, ছোট হামিদুল, অমেদুল। তিনজনই মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে। এই তিন ভাই মূলত এই চক্রের চালক। তাদের আরও সদস্য রয়েছে। তাদের চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, একই এলাকার দুলু মিয়ার ছেলে মোকাদ্দেস মিতা, নুর মোহাম্মদের ছেলে সাইদুল ইসলাম, আয়নাল হকের ছেলে ওবাইদুল ইসলাম, মৃত সোনাউল্লাহর ছেলে নুরজাম্মান। তাদের বিরুদ্ধে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের নেটওয়ার্ক এতো বেশি শক্তিশালী যে, কোনো প্রশাসনের লোক কিংবা সাংবাদিক ওই এলাকার আশপাশে প্রবেশ করলেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং নিরাপদে সরে যায়। যার কারণে প্রশাসন খুব সহজে তাদের ধরতে পারে না। যার কারণে ধীরে ধীরে তাদের মাদকের কারবারে আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এই চক্রের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে ভয় পায় তাদের বিরুদ্ধে। কেউ সাহস করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে কিংবা প্রশাসনকে তথ্য দিলে তাকেই উল্টো মাদকের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় ওই সব মাদক কারবারিরা। এসব কারণে অনেকেই আর তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তার সহযোগিতায় এবং প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই কারবার চলার কারণে এলাকায় মাদকের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। দিনদিন এই মাদকের কারবারের পরিধি বেড়েই চলছে।

এদিকে মাদকের সহজলভ্যতায় তরুণ সমাজ যেমন করে বিপথে যাচ্ছে, তেমনি তাদের শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে এবং তাদের পরিবারগুলো ভেঙে পড়ছে। এখন মাদকসেবীরা ওই সব পরিবারের কাছে এক ধরনের বোঝা ও অভিশাপে পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে মাদকের টাকার জোগান তৈরিতে এক শ্রেণির তরুণ চুরি, ছিনতাইসহ নানা রকমের অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে নানান ধরনের বিশৃঙ্খলা। এই মাদক চক্রের বিরুদ্ধে অবিলম্বে অভিযান চালিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে, ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোরাল আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মর্নেয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও মাদকবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে স্থানীয়ভাবে সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ইউনিয়ন কমিটিকে আরও সক্রিয় করা হচ্ছে। তবে এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক অভিযান ছাড়া কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়।

গঙ্গাচড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছি। তবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে অভিযানের পরিধি বাড়ানো হবে। স্থানীয়দের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। স্থানীয়দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমরা এই মাদকের চক্র চিরতরে বন্ধ করতে চাই।

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি রয়েছে। যারা সমাজে এই ভয়াবহ মাদক ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করবো। সমাজ থেকে মাদক দূর করতে না পারলে আজকের এবং আগামীর তরুণ সমাজকে রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। এসময় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।