তিস্তার বুক চিরে অবিরাম বয়ে আসা স্রোত আর ভাঙনের শব্দে আতঙ্কিত নদী-তীরবর্তী এলাকার মানুষ। ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
অন্যদিকে এলজিইডি কর্তৃক প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রকল্প ঘেঁষে। এতে ভাঙনের ভয়াবহতা বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী-তীরবর্তী বোল্ডারের মাথা পর্যন্ত এলজিইডির একটি সড়ক পাকাকরণের জন্য বালু উত্তোলনে পাশের তিস্তা নদীতে বসানো হয়েছে ড্রেজার। সেখান থেকে রাত-দিন বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কার পাশাপাশি জিওব্যাগ ফেলার কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
রংপুরের উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার করালগ্রাসে বিলীন হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি। ইতোমধ্যে অর্ধশত বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। একই সঙ্গে নদীর তীর ঘেঁষে বসানো ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিওব্যাগ কার্যত কোনো কাজে না আসার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভাঙনের মুখে পড়ে অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু আশপাশে নিরাপদ জায়গার অভাবে নতুন করে বসতি গড়ার জায়গা পাচ্ছেন না অনেকে। আতঙ্কে দিন পার করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
তিস্তাপাড়ে বসবাসকারী মানুষরা বলছেন, ভাঙন ঠেকাতে একপাশে উদ্যোগ আর অন্যপাশে ধ্বংস। এই দ্বৈত অবস্থান না থামলে আমাদের মতো পরিবারগুলো তিস্তার গর্ভেই বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল বলেন, একদিকে সরকার জিওব্যাগ দিচ্ছে, আরেকদিকে তাদেরই আরেক সংস্থা এলজিইডি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ড্রেজার বসিয়ে নদী খুঁড়ছে। এটা কি মানুষ নিয়ে তামাশা নয়?
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাঈদ বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, গত কয়েকদিনে ৪৯টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখানে কমপক্ষে ২০ হাজার জিওব্যাগ দরকার। যা বরাদ্দ হয়েছে, তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব না।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় বালু উত্তোলন ঝুঁকিপূর্ণ। বালু উত্তোলন বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সরফরাজ বান্দা বলেন, এটা আমরা জানি না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।