চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ

অপারেশনের পর ফেরেনি জ্ঞান, ৫ দিন পর মারা গেলো রোগী

ঠাকুরগাঁও শহরের মাম হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গলব্লাডার অপারেশনের পর আর জ্ঞান ফেরেনি খায়রুল ইসলাম (৫০) নামে রোগীর। টানা ৫ দিন আইসিইউতে থাকার পর তিনি মারা গেছেন। 
 
বুধবার (২৭ আগস্ট) ভোররাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থান দিনাজপুরে মেডিকেলে মারা যান। চিকিৎসায় অবহেলায় জড়িত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন রোগীর স্বজন ও প্রতিবেশীরা। খায়রুল ইসলাম সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের পাইকপারা এলাকার বাসিন্দা। 
 
রোগীর স্বজনরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঠাকুরগাঁও শহরের মাম হাসপাতালে ডা. রুহুল কুদ্দুস ও ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) ডা. আলিরেজা আল বুরানীর কাছে গলব্লাডারের অপারেশন করেন খায়রুল ইসলাম। অপারেশনের পর ৯ ঘন্টা জ্ঞান না ফেরায় স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব চাইতে গেলে কৌশলে দিনাজপুর মেডিকেলে রোগীকে পাঠিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে ৫ দিন আইসিআইতে থাকার পর আজ ভোরে রোগী মারা যায়। 
 
রোগীর মেয়ে খুরশিদা জাহান খুশবু জানান, গলব্লাডার অপারেশন করতে সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট। আমার বাবার সময় লেগেছে ঘন্টার উপর। এরপরে আর জ্ঞান ফিরেনি। পরেরদিন সকাল পর্যন্ত বাবার জ্ঞান না ফেরায় একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করার পরও তারা কোনকিছু হয়নি বলে এড়িয়ে গেছে। ঘুমের ঔষধ বেশি হয়ে গেছে বলে তাদের সান্ত্বনা দেওয়া হয়। 
 
খুশবু আরও বলেন, চিকিৎসক ও হাসপতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমার বাবাকে হারিয়েছি। আমি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ছাড়বো না। 
 
রোগীর প্রতিবেশীরা জানান, সুস্থ্য একটা মানুষকে অপচিকিৎসার কারণে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। এটা এক ধরনের হত্যার শামিল। বেসরকারি হাসপাতালগুলো টাকা কামানোর ধান্দায় ব্যস্ত থাকে, রোগীর কি হলো সেদিকে মোটেও নজর রাখে।
 
এসব অপচিকিৎসার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান রোগীর স্বজন ও প্রতিবেশীরা। 
 
রোগীর ভাতিজা জানান, এ্যানেসথেসিয়া অতিরিক্ত প্রয়োগ এবং অপারেশন পরবর্তী সময়ে রোগীর খেয়াল রাখেনি হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা। অবহেলার কারণেই তিনি মারা গেছে। আমরা চাই, এমনভাবে অপচিকিৎসার কারণে যেন কোন পরিবার তার স্বজন না হারায়। 
 
মাম হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার সফিউল আলম ভুট্টু বলেন, অপারেশনের পর রোগীর পরবর্তী অবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর এখানে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় দিনাজপুর মেডিকেলে রেফার্ড করে। রোগীর চিকিৎসার তাদের কোন অবহেলা ছিল না বলে দাবি করেন ম্যানেজার। 
 
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া) ডা. আলিরেজা আলবুরানী বলেন, আমাদের দিক থেকে কোন অবহেলা ছিল না। অপারেশনের পর আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। কিন্তু হটাৎ করেই রোগীর পটাশিয়াম বেড়ে যাওয়ার কারণে দিনাজপুরে রেফার্ড করে দেয়। 
 

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরোয়ারে আলম খান জানান, এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।