নিজস্ব প্রতিবেদক: শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের নিজস্ব চেক লিস্ট জালিয়াতি করার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিদর্শক, মামলার বাদীসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাসহ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালতে মামলার বাদী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে জেরা করার সময় ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন মৌখিকভাবে এ আবেদন করেন।
তবে আদালত এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করার কথা বলেন। এ সময় ড. ইউনূসের আইনজীবী লিখিত আবেদন করার জন্য সময় আবেদন করেন। পরে আদালত আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলার পরবর্তী জেরার দিন ধার্য করেন।
জেরার সময় আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন আদালতে বলেন, আদালতের কাছে আবেদন জানাবো একজন নোবেলজয়ীকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর জালিয়াতি করার অপরাধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকসহ যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার জন্য। তিনি আরো বলেন, এই জালিয়াতি স্বীকার করার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এসময় আদালত বলেন, জালিয়াতি হয়েছে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
এসময় আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন মামলার বাদিকে প্রশ্ন করেন আপনি জালিয়াতি করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন? জবাবে মামলার বাদি বলেন, সঠিক নয়।
শুনানির এক পর্যায়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী বাদীর কাছে জানতে চান, আপনি যখন কোথাও পরিদর্শনে যান, তখন মালিক পক্ষকে জব্দ তালিকা বা চেক লিস্ট দেন। জবাবে পরিদর্শক বলেন চাইলে এক কপি দেই। তখন ইউনূসের আইনজীবী বলেন, এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মালিক পক্ষকে কি কোনো জব্দ তালিকা বা চেক লিস্ট দিয়েছেন। জবাবে বলেন, হ্যা দিয়েছি। তখন ইউনূসের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মালিকপক্ষকে দেয়া চেক লিস্ট আর কোর্টে দেয়া চেক লিস্টের মিল নেই। এ সময় তিনি আদালতের কাছে এই মামলার বর্তমান বাদীসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়না জারির আর্জি জানান। জবাবে আদালত লিখিতভাবে আবেদন করতে বলেন।
এ সময় আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন আদালতের কাছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, মামলার বাদীসহ চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার জন্য আদালতের কাছে সুয়োমোটো আদেশ দেওয়ার আবেদন করেন।
এ সময় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, সুয়োমোটো আদেশ দেওয়া যায় না।
এরপর ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আমরা আবেদন করব।
এরপর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের অপর আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, সাক্ষীর জেরা শেষ করেন।
জবাবে ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আরো তিন দিন লাগবে। তিনি আরো বলেন, সব ধরা পড়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবী জেনে গেছে। এসময় দুইপক্ষের আইনজীবীরা তর্কে জড়ান।
এ সময় দুইপক্ষের আইনজীবীদের চিৎকারের একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান।
এরপর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আবার আদালত বসে। এ সময় ড. ইউনূসের পক্ষে সময় আবেদন করা হলে আদালত তা গ্রহণ করে পরে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। পরে আদালত আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষীকে জেরার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
এ বিষয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ড. ইউনূসকে দোষীসাব্যস্ত করার জন্য খালি জায়গায় টিকমার্ক দিয়ে জালিয়াতি করার জন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেছি।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তারা চায় মামলাকে প্রলম্বিত করার জন্য। তারা একটি সাজেশন দিয়েছে যে ইনেসপেকশন করা হয়েছে তা জাল। ওই সাজেশন ধরে উনি আদালতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন। অথচ এটা একটা সাজেশন। এটা বাদী স্বীকার করেননি। বাদী বলেছেন এটা সত্য নয়। এটাকে উনি বলেছেন জালজালিয়াতি। এই ধরণের বক্তব্য দেওয়া অযাচিত। কোট বার বার উনাকে রিমান্ড দিয়েছেন। উনি থামছেন না। উনি বার বার বলেছেন নোবেলে লরিয়েট। আসলে ক্রস একজামিনেশন যদি ভালো করে না বোঝে, না শেখে এই ধরণের ভুল হওয়া স্বাভাবিক। বাদি যখন ইনসপেকশনে গিয়েছে তখন বলেছে আমাদের একটা কাগজ দেন। সেই একটা ফটোকপি দিয়েছে। সেই ফটোকপিতে তাদের স্বাক্ষর থাকার কথা নয়। যখন রিপোর্ট হয়ে যাবে তখন স্বাক্ষর লাগবে। তিনি বলেন, আমাদের কপি যদি জাল হয়, তাহলে তারা আগে যে কপি নিয়েছে সেটাও জাল।
এর আগে ১২টা ২৬মিনিটে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে আছেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। সাথে ছিলেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ। অপরদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে উপস্থিত আছেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। গত ৩১ শে আগস্ট এই মামলার সাক্ষগ্রহণের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন আদালত।