ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষকদের একাংশ কলেজগুলোকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলেছেন, নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরিবর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে একটি পৃথক প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে সাত কলেজ পরিচালনা করা যেতে পারে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা উপদেষ্টাকে দেওয়া স্মারকলিপিতে দেওয়া বিকল্প রূপরেখা বা প্রস্তাবে এসব কথা বলেছেন সাত কলেজের শিক্ষকরা। কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমে বিদ্যমান সংকট নিরসনে স্থায়ী সমাধান এবং বিসিএস (সাধারণ) শিক্ষা ক্যাডারের পদসমূহ, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অক্ষুণ্ণ রেখে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে এ স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
তারা বলেছেন, সাত কলেজকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা যায়, যেখানে উপাচার্য, ট্রেজারার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বডি এবং হিসাব ও অর্থ শাখা থাকবে। তারা সাত কলেজের শিক্ষার অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে, যেখানে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সদস্যরা অনার্স ও মাস্টার্সে পাঠদান করবে। উচ্চতর ডিগ্রীর যেমন- এমফিল ও পিএইচডি বা বিশেষায়িত কোনও মাস্টার্স কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষক নিয়োগ দ্বারা পাঠ দান করা হবে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ মডেলে পরিচালিত হয়।
শিক্ষকদের বিকল্প রূপরেখা বা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: ঢাকার উপকণ্ঠে বা কোনো কৌশলগত অবস্থানে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, যেটি শুধুমাত্র এ সাতটি কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এটি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমান সংকটের স্থায়ী সমাধান দেবে।
বাংলাদেশের ৫৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টিই ঢাকাতে। ১১৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭০-৮০টিই ঢাকাকেন্দ্রীক। কাজেই নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের ভিত্তিতে হওয়া উচিত উল্লেখ করে তারা বলছেন, বিদ্যমান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই সাত কলেজ পরিচালিত হলে সেটি যৌক্তিক হবে এবং সরকার বড় ধরনের আর্থিক ব্যয় ও শিক্ষা সঙ্কোচনের হাত থেকে রেহাই পাবে।
ঢাকার আগারগাঁও বা ঢাকার পাশে পূর্বাচল বা কেরানিগঞ্জে একটি প্রশাসনিক ভবন করে এই সাত কলেজকে পরিচালনা করা সম্ভব বা নতুন আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায় বলে মনে করেন শিক্ষকরা। এতে সাত কলেজও অক্ষুন্ন থাকবে এবং সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। নতুন আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবে। হাইব্রিড ইউনিভার্সিটির জন্য অনেকগুলো ক্যাম্পাস দরকার নেই। তাই সুবিধাজনক সরকারি জায়গায় প্রশাসনিক ভবন করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।
রুপরেখায় শিক্ষকরা আরও বলেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় জাতীয় সংসদে বলা হয়েছিল আর কোনো কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে না। কিন্তু পরবর্তিতে বিএম কলেজ ও রংপুর কারমাইকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি উঠলে তা নাকোচ করে নতুন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কাজেই সাত কলেজকে বিলুপ্তি বা সংকোচন না করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করা যৌক্তিক।
কলেজেগুলোয় জরুরি বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক ভবন, ল্যাব, লাইব্রেরি, ছাত্রাবাস ও পরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম উন্নত ও গতিশীল হবে উল্লেখ করে শিক্ষকরা বলছেন, সাত কলেজে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ জোরদার করা জরুরি।