১৮ শিক্ষার্থীর জন্য ২২ শিক্ষক, তবু সবাই ফেল!

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় ১৬ কলেজ-মাদ্রাসায় গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ফল বিপর্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

মির্জাপুরের ফতেপুর ময়নাল হক স্কুল এন্ড কলেজে ১৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছিল ২২ জন শিক্ষক। তবু সবাই ফেল করেছে। ১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র অসন্তোষসহ টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই সামনে এসেছে।

অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিটি স্কুল-কলেজে ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষকমন্ডলী ও এলাকাবাসীর মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুল-কলেজে না এসে মোবাইলে আসক্তসহ মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে পরীক্ষায় এমন ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে।

জানা গেছে, ফতেপুর ময়নাল হক উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৬৯ সালে স্থানীয় দানবীর ফজলুল হক নন্দ মিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। বিগত দিনে ফলাফল সন্তোষজনক হলেও প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে বর্তমানে বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রধান শিক্ষক এটিএম আব্দুল মতিন গত ২ বছর ধরে বিদ্যালয়ে আসতে পারেন না। স্কুলে নিয়মিত পাঠদানও হচ্ছে না। ২০২৩ সালে আবার বিদ্যালয়টি নাম পরিবর্তন করে ফতেপুর ময়নাল হক স্কুল এন্ড কলেজ কলেজ করা হয়। ১৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২২ জন শিক্ষক ও কর্মচারী থাকলেও চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় কেউ পাস করেনি। শিক্ষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগের মূল কারণ প্রতিষ্ঠানে চরম দ্বন্দ্ব।

বিস্তারিত জানার জন্য প্রধান শিক্ষক এটিএম আব্দুল মতিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবু গৌরাঙ্গ সরকার বলেন, বিদ্যালয়ের নানা সমস্যার কারণে প্রধান শিক্ষক কলেজে আসতে পারেন না। ১৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০২৩ সালে মানবিকের কলেজ শাখা চালু করা হয়েছে। এটা ছিল প্রথম ব্যাচ। নানাবিধ সমস্যার কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর মির্জাপুর উপজেলার সাধারণ শাখায় বিভিন্ন কলেজ থেকে ২৩৮৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১০৯৮ জন। পাসের হার ৪৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ ও ভারতেশ্বরী হোমস শতভাগ পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ জন।

রাজাবাড়ি কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ২৯৬ জন, পাস করেছে ২০১ জন, পাসের হার ৬৭ শতাংশ। বাঁশতৈল খলিলুর রহমান কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ২৭০ জন, পাস করেছে ১২৪ জন, পাসের হার ৪৬ শতাংশ। ওয়ার্শি নতুন কহেলা কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ১২৪ জন, পাস করেছে ৫১ জন, পাসের হার ৪৬ শতাংশ। মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ১১৬২ জন। পাস করেছে ৫২৭ জন, পাসের হার ৪৬ শতাংশ। বংশাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ৮০ জন, পাস করেছে ৩৩ জন, পাসের হার ৪২ শতাংশ। ড. আয়েশা রাজিয়া খোন্দকার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ৬৪ জন, পাস করেছে ১৯ জন, পাসের হার ১৬ শতাংশ। ছাফদার আলী কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ৬ জন, পাস করেছে একজন, পাসের হার ১৬ শতাংশ। মির্জাপুর মহিলা কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ২২১ জন, পাস করেছে ৩১ জন, পাসের হার ১৪ শতাংশ এবং ফতেপুর ময়নাল হক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ১৮ জন, পাস শুন্য শতাংশ। এই কলেজ থেকে কেউ পাস করেনি।

এছাড়া বিজনেস ম্যানেজমেন্টের (বিএমএ শাখা) ৩টি কলেজ থেকে ১৯৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৮৭ জন। আলহাজ্ব শফিউদ্দিন মিঞা এন্ড একাব্বর হোসেন টেকনিক্যাল কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ৭০ জন, পাস করেছে ৬৯ জন। পাসের হার ৯৯ শতাংশ। নতুন কহেলা কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ৬৮ জন, পাস করেছে ৬৩ জন। পাসের হার ৯৪ শতাংশ। গ্রামবাংলা বিজনেজ ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ৫৫ জন। পাস করেছে ৫৫ জন, পাসের হার শতভাগ।

আলীম পরীক্ষায় বানিয়ারা সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ১৮ জন। পাসকরেছে ১৩ জন, পাসের হার ৭২ শতাংশ।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর নির্বাহী অফিসার এবিএম আরিফুল ইসলাম ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জুলফিকার হায়দার বলেন, মির্জাপুর উপজেলায় যেসব কলেজে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে, সেগুলোর উপর নজরদারি বাড়ানো হবে। পাশাপাশি শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ফতেপুর ময়নাল হক স্কুল এন্ড কলেজ ফলাফল কেন খারাপ করেছে, এ বিষয়ে পরিদর্শন ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।