২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়নের জন্য তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের বিকল্প নেই। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের দাবিগুলো পুরোপুরি প্রতিফলিত না হলেও আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তা করা গেলে একদিকে তামাকের ব্যবহার যেমন কমবে, অন্যদিকে তামাকপণ্য থেকে আসা করও তেমনি বাড়বে। সেজন্য তামাক পণ্যে ৭০ শতাংশ করারোপ করা প্রয়োজন।
তামাক পণ্যের বহুবিধ ব্যবহারের কারণে বিশ্বে জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির সম্মুখীন। বিষয় বিশেষজ্ঞ এবং তামাক প্রতিরোধে কমিউনিটি পর্যায়ে যারা নিবিড়ভাবে কাজ করছেন তারা বলছেন মৃত্যু এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির বিচার-বিশ্লেষণে বিষয়টি মঙ্গলজনক নয়। তামাকের অতিরিক্ত ব্যবহারে মানুষের মৃত্যু ঘটছে, এই মৃত্যু অনেক পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তবে এ জন্য আইনপ্রণেতা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, তামাক-বিরোধী সামাজিক সংগঠনসহ সকল পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সিগারেট কার্যকর করারোপে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর-এর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী ,বিআইডিএস (বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান) এর গবেষণা পরিচালক ড. এস এম জুলফিকার আলী, উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী, প্রতিষ্ঠানটির প্রথম সচিব ( ভ্যাট পলিসি) মো. মশিউপর রহমান বক্তব্য রাখেন।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে সিগারেটের দাম ও কর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানোর ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নিম্ন স্তরের সিগারেট বিক্রির পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিগারেটের কর কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বিষয়ে সকল অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
ড. এস এম জুলফিকার আলী বলেন, বাংলাদেশে মোট যে সিগারেট বিক্রি হয় তার মধ্যে শতকরা ৭০-৭৫ ভাগই সস্তা নিম্ন স্তরের সিগারেট । তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলো বহু বছর ধরে নিম্ন স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে অন্য স্তরের ( অর্থাৎ মধ্যম,উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরের) সিগারেটের সমান করার দাবি জানিয়ে আসছিলো।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে সকল স্তরের সিগারেটর ওপর সমান ৬৭ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ( এনবিআর)। তাদের এই উদ্যোগ নি:সন্দেহে তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই শুল্ক হার আরও বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করতে হবে বলে মনে করেন জুলফিকার আলী। তা না হলে বাংলাদেশে সিগারেট ব্যবহারের হার কাক্সিক্ষত মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে তিনি জানান।
উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন, এ বছরের জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম ৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তামাক নিয়ন্ত্রণ কাঙ্খিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে চলতি অর্থবছরের মাঝ পর্যায়ে এসে এই উদ্যোগ না নিয়ে শুরুতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া গেলে আরও বেশি সুফল পাওয়া যেতো বলে মনে করেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন বলেন, চলতি অর্থ বছরের মাঝামাঝি এমন পদক্ষেপ নেয়ায় চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ সিগারেট ব্যবহার শতকরা ১৫.১ শতাংশ থেকে কমে ১৪.১৯ শতাংশ হতে পারে বলে তিনি জানান জানান।
আব্দুল্লাহ নাদভী আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতেই এমন পদক্ষেপ নিয়ে এই হার আরও কমিয়ে শতকরা ১৩.৮৪ শতাংশ করা সম্ভব হতো।
এনবিআর-এর পক্ষ থেকে উপস্থায়নায় প্রতিষ্ঠানটির প্রথম সচিব ( ভ্যাট পলিসি) মো. মশিউর রহমান সিগারেটে করারোপের মাধ্যমে বাংলাদেশে সিগারেট ব্যবহার হ্রাসে এনবিআর-এর কৌশল, সাফল্য ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, সিগারেটে দাম নির্ধারণের সময় রাজস্ব আদায় নয়, বরং জনস্বাস্বাস্থ্য সুরক্ষাকেই বেশি অগ্রাধিকার দিতে চায় এনবিআর।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে এনবিআর এর ট্যাক্স পলিসি প্রথম সচিব মির্জা মোহাম্মদ মামুন সাদাত এবং বিসিআইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রমহানও বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় বিশেষজ্ঞ ও নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে মতবিনিয়য়ে অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম কর্মীরা। কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অফ প্রোগ্রামস শাহীন উল আলম।