কিডনি রোগীদের দিনে কত লিটার পানি পান করা উচিত

কিডনি সুস্থ রাখতে এবং শরীরের নানা কার্যপ্রক্রিয়া ঠিকভাবে চালাতে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। সাধারণভাবে বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের দিনে প্রায় ৮ গ্লাস বা ২ লিটার পানি পান করা উচিত। তবে এই হিসাব সবার জন্য এক নয়। কারও বয়স, ওজন, আবহাওয়া এবং দৈহিক পরিশ্রমের পরিমাণ অনুযায়ী পানির চাহিদা কম-বেশি হতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করাই সবচেয়ে ভালো।

দেহে প্রতিদিন তৈরি হওয়া বর্জ্য কিডনি দিয়ে বের হয়। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে বর্জ্য ও অতিরিক্ত পানি জমে শরীরে ক্ষতি করে। সমস্যা বাড়লে ডায়ালাইসিস লাগতে পারে। তাই প্রতিদিন কতটা পানি খাওয়া দরকার, তা জানা ও মানা খুব জরুরি।

ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের ডা. মো. মতলেবুর রহমান জানালেন, প্রতিদিন কতটা পানি দরকার তা নির্ভর করে বয়স, দেহের গড়ন, পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস, শরীরের অবস্থা ও তাপমাত্রার ওপর। তাই সবার জন্য এক পরিমাণ পানি ঠিক করা যায় না।

কম বা বেশি পানির কিছু বিপদ

খুব কম কিংবা খুব বেশি পানি খাওয়া হলে কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। পানি খাওয়া কম হলে প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে, কিডনি বা মূত্রনালিতে পাথর হতে পারে। খুব বেশি পানি খেলে আবার রক্তে লবণের মাত্রা কমে যেতে পারে। অতিরিক্ত পানি খেয়ে ফেললে বমিভাব, পেশিতে খিঁচ ধরা, খিঁচুনি হওয়া এমনকি জ্ঞান হারানোর মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে।

Drinking water

পানির পরিমাণ ঠিক করবেন যেভাবে

আপনার জন্য রোজ ঠিক কতটা পানি প্রয়োজন, তা আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন। কত গ্লাস বা কত লিটার পানি খেতে হবে, তা আপনি বুঝতে পারবেন নিজের শরীরের ভাষাতেই।

প্রস্রাব করার সময় রং খেয়াল করুন। হালকা খড়ের মতো হলদে রং হলে বুঝতে হবে পানি খাওয়ার পরিমাণ ঠিক আছে। তবে মনে রাখবেন, কিছু খাবার এবং ওষুধের জন্য প্রস্রাবের রং বদলে যেতে পারে।

পর্যাপ্ত পানি খেলে আপনার রোজ ৪-৮ বার স্বাভাবিক পরিমাণে প্রস্রাব হবে, আপনি তৃষ্ণার্ত অনুভব করবেন না কিংবা অন্য সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও আপনি ক্লান্তি অনুভব করছেন, এমনটা হবে না। এসবের অন্যথা হলে বুঝতে হবে পানি খাওয়ার পরিমাণ ঠিক নেই।

গাঢ় প্রস্রাব হলে, পরিমাণে কম হলে, ২৪ ঘণ্টায় চারবারের কম প্রস্রাব হলে, মুখ শুকিয়ে গেলে বা কারণ ছাড়াই ক্লান্তি অনুভব করলে আপনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন বলে ধরে নিতে পারেন।

অন্যদিকে প্রস্রাব একেবারে রংহীন হলে, পরিমাণে বেশি হলে, রোজ ৮ বারের বেশি প্রস্রাব হলে বুঝতে হবে অধিক পরিমাণ পানি খাচ্ছেন আপনি।

খেয়াল রাখবেন, আবহাওয়া খুব গরম হলে, অতিরিক্ত ঘাম হলে, প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রম করলে কিংবা জ্বর হলে পানির পরিমাণ খানিকটা বাড়িয়ে দিতে হয়। আবার আবহাওয়া ঠান্ডা হলে আপনি এমনিতেই পানি কম খেতে পারবেন।

কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস থাকলে বা ঝুঁকি থাকলে অবশ্যই একটু বেশি পানি খাওয়া উচিত। অন্য কোনো কারণে পানি খাওয়া বিধিনিষেধ না থাকলে দিনে অন্তত তিন লিটার পানি খাওয়া উচিত।

কেবল পানিই নয়

বিভিন্ন পানীয় এবং খাবার থেকেও পানি পাই আমরা। স্যুপ, ডাল, পাতলা ঝোলের তরকারি প্রভৃতি পানির উৎস। তবে কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক বা অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় গ্রহণ না করাই ভালো, তাতে কিডনির ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে প্রস্রাব বেশি হয়। তাই পানির ঘাটতিতে ভুগতে হতে পারে। এই বিবেচনায় হারবাল চা কিংবা ডিক্যাফ কফি তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর পানীয়।

ফলমূল, ফলের রস এবং লাউ, চিচিঙ্গা, কুমড়ার মতো অনেক সবজিতেই পানি পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে গ্রহণ করা পানির পরিমাণ ঠিক থাকলেই হলো। তাতেই সুস্থ থাকবে আপনার কিডনি।