কমছে মাতৃদুগ্ধ পান, বাড়ছে নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি

নবজাতককে মায়ের দুধ না দিলে অপুষ্টি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। জন্মের পর প্রথম ঘণ্টায় স্তন্যপান না করালে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন আইসিএমএইচ (Institute of Child and Mother Health) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান।

বিএনএফ (Bangladesh Nationalist Front) অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমানের মতে, মায়ের প্রথম দুধ নবজাতকের জন্য প্রাকৃতিক টিকা। এতে থাকা অ্যান্টিবডি, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল শিশুর রোগ প্রতিরোধ, বৃদ্ধি ও মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে। এটি ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা থেকে সুরক্ষা দেয়।

তিনি আরও জানান, মাতৃদুগ্ধ পানের হার কমে যাওয়ার পেছনে শিশুখাদ্য শিল্পের আগ্রাসী বিপণন, মাতৃত্বকালীন ছুটির স্বল্পতা ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব বড় কারণ। ফর্মুলা দুধের প্রচারে অনেক মা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, আর বেসরকারি খাতে ছুটি কম থাকায় মায়েরা বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশে যদি সব শিশুজন্মের পর প্রথম ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ পেতে শুরু করে এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মাতৃদুগ্ধ পান করে, তাহলে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার নবজাতকের মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বিএনএফের সভাপতি অধ্যাপক মো. মাহবুবুল হক।

বিএনএফের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুফিয়া খাতুন বলেন, মাতৃদুগ্ধ পানের হার বাড়াতে হলে বেসরকারি খাতে অন্তত ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে স্তন্যদান কর্নার স্থাপন, শিশুখাদ্য বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে কড়া আইন প্রয়োগ, গর্ভাবস্থা থেকেই মায়েদের পুষ্টি ও স্তন্যপান বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং পরিবার ও কর্মস্থলে স্তন্যপান-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

বিপিএস মহাসচিব অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। এটি শুধু খাদ্য নয়, এটি জীবন রক্ষাকারী প্রতিষেধক। যে দেশ যত বেশি মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করতে পারে, সে দেশের শিশুমৃত্যুর হার তত কম।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সালে যেখানে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত একচেটিয়াভাবে মায়ের দুধ পান করত প্রায় ৬৪ শতাংশ শিশু, সেখানে ২০২২ সালে এ হার নেমে আসে ৫৫ শতাংশে। অর্থাৎ এক দশকে প্রায় ৯ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে মাতৃদুগ্ধ পানের হার। সম্প্রতি আট বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জন্মের প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পায় গড়ে ৪৯ শতাংশ শিশু।