শিশুর সর্দি-কাশি হলে মা-বাবার চিন্তার শেষ থাকে না। আর আরাম দেওয়ার জন্য অনেক সময় কাশির সিরাপ দেওয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি ভারতে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কাশির সিরাপ কি আদৌ শিশুদের জন্য নিরাপদ?
গবেষণায় দেখা গেছে, কাশির সিরাপ প্রাপ্তবয়স্কদের জীবন বিপন্ন না করলেও বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে খিঁচুনি, ঝিমুনি, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি।
শিশুদের ক্ষেত্রে তা আরও গুরুতর হয়ে ওঠে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (CDC) একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, আফ্রিকার গাম্বিয়াতে আমদানি করা কিছু কাশির ওষুধে ডাইথিলিন গ্লাইকল বা ইথিলিন গ্লাইকল নামের ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা শিশুদের কিডনিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস জানিয়েছিলেন, চার ধরনের কাশির সিরাপ শিশুদের মধ্যে কিডনির গুরুতর সমস্যা ও মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। এই সিরাপগুলো হল-
- প্রোমেথাজিন ওরাল সলিউশন
- কফেক্সমালিন বেবি কাফ সিরাপ
- মেকফ বেবি কাফ সিরাপ
- মাগরিপ এন কোল্ড সিরাপ
গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, আমেরিকায় কাশির সিরাপের কারণে ১২৩ শিশু মৃত্যু এবং আফ্রিকায় ৬৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আমেরিকায় আরও দেড় হাজার শিশু বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছে।
ফলে, আমেরিকার FDA দুই বছরের নিচের শিশুদের জন্য প্রেসক্রিপশন ছাড়া কাশির সিরাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। কানাডায় এই বয়সসীমা ৬ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলোর মধ্যে রয়েছে হাইড্রোকার্বন, গুয়াইফেনেসিন, সিউডোএফিড্রিন, ট্রাইপোলিডিন, ডেক্সট্রো মেথরফেন, অ্যান্টিহিস্টামিন, ডাইথিলিন গ্লাইকল ইত্যাদি। তাই কাশির সিরাপ কেনার আগে অবশ্যই ওষুধের মোড়কে উপাদানগুলি পরীক্ষা করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করান, শিশুর সর্দি-কাশিতে কাশির সিরাপের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান ব্যবহার করা ভালো। যেমন- মধু, গরম দুধ, গরম মশলার চা, তুলসী ও বাসক পাতার রস।
এসব প্রাকৃতিক উপায় শিশুদের সর্দি-কাশি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং নিরাপদ।