জীবনযাত্রার পরিবর্তন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত রুটিন এবং মানসিক চাপের কারণে ডায়াবেটিস এখন আর কেবল বয়স্কদের রোগ নয়, বরং অল্প বয়সের মানুষকেও আক্রান্ত করছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ধীরে ধীরে তা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেমন কিডনি, হার্ট, চোখ ও স্নায়ুতন্ত্রে (নার্ভ) মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ পায়ে প্রকাশ পায়। তাই সময়মতো এই লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা গেলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুতন্ত্র ও রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই কারণে পায়ে যেসব সাধারণ সতর্ক সংকেত দেখা দিতে পারে, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
৭টি সাধারণ সতর্ক সংকেত যা পায়ে দেখা যায়
১. পায়ে ব্যথা বা অস্বস্তি: পায়ে জ্বালা করা, ঝিনঝিন করা (Tingling), লাল হয়ে যাওয়া বা পায়ের অসাড় ভাব (Numbness) অনুভব করা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক স্নায়ু সমস্যার (Peripheral Neuropathy) লক্ষণ হতে পারে।
২. ক্ষত বা ঘা ধীরে ধীরে সেরে না ওঠা: ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালীতে রক্ত সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পায়ে হওয়া ছোটখাটো ক্ষত বা ঘা দ্রুত সেরে ওঠে না, বরং দীর্ঘ সময় ধরে রয়ে যায়।
৩. ফোসকা বা আলসার: পায়ের নিচে বা আঙুলের তলায় ফোসকা (Blister), ঘা বা আলসার দেখা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ, যা ডায়াবেটিক ফুট হওয়ার ঝুঁকি নির্দেশ করে।
৪. পায়ের আকৃতির পরিবর্তন: ডায়াবেটিস পায়ের হাড় বা নখের স্বাভাবিক গঠনেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত স্নায়ুর ক্ষতির কারণে পায়ের হাড় দুর্বল হয়ে আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে (যেমন Charcot's Foot)।
৫. ত্বকের সমস্যা: পায়ের পাতায় ভারী ভাব, পা ফেলতে সমস্যা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ত্বক বা গোড়ালি ফাটা, আঙুলের মাঝখানে চামড়া ফাটা বা চামড়া ওঠা এগুলো সবই ডায়াবেটিসের কারণে সৃষ্ট ত্বকের সমস্যার লক্ষণ।
৬. ত্বকের রঙে পরিবর্তন: পায়ের ত্বকের রঙ হালকা বা গাঢ় হয়ে যাওয়া, নীলচে বা ফ্যাকাশে ভাব দেখা দেওয়া রক্ত সঞ্চালনে সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
৭. অস্বাভাবিক ফোলাভাব: গোড়ালি বা পায়ে অস্বাভাবিক ফোলাভাব (Edema) দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি কিডনি বা রক্ত সঞ্চালন সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
পায়ে উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা গেলে দ্রুত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সময়মতো রোগ নির্ণয় ও সঠিক যত্ন নিলে ডায়াবেটিসের কারণে সৃষ্ট পায়ের জটিলতা, যেমন 'ডায়াবেটিক ফুট' বা ইনফেকশন, অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।