অনেকের কাছেই ব্ল্যাক কফি কেবল একটি পানীয় নয়, দৈনন্দিন জীবনে শরীরকে অনবরত কর্মক্ষম রাখার উপায়। কর্মস্থলে যারা বিভিন্ন পেশায় যুক্ত আছেন, তারাও শরীরকে চাঙ্গা রাখার জন্য ব্ল্যাক করি পান করেন। আমরা যা কিছু খাই বা পান করি, স্বাভাবিক নিয়মে তা আমাদের শরীর এবং স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ব্ল্যাক কফিও তার ব্যতিক্রম নয়। সাধারণত ব্ল্যাক কফি পাউডার এবং পানির সংমিশ্রণে এ কফিটা তৈরি হয়। তবে কফির স্বাদ বাড়ানোর জন্য অনেকে এতে চিনি, দুধ এবং ক্রিম দিয়ে থাকেন। আট আউন্স ব্ল্যাক কফিতে ০% ফ্যাট, ০% কোলেস্টেরল, ০% সোডিয়াম, ০% চিনি, ৪% পটাসিয়াম, ০% কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই অতি প্রিয় ব্ল্যাক কফির ভালো-মন্দ দুদিকই রয়েছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
ব্ল্যাক কফির স্বাস্থ্যকর দিক
প্রাকৃতিকভাবেই কফিতে ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৩, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ফেনোলিক যৌগ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। ব্ল্যাক কফিতে ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম, রিবোফ্লাবিন এবং নিয়াসিন থাকে।
হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে: ব্ল্যাক কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত দু-এক কাপ কফি পানে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: কিছু ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়, ব্ল্যাক কফিতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপ পেলে, আপনি ব্ল্যাক কফি খেতে পারেন। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
অ্যালঝেইমার রোগ-প্রতিরোধ করে: বয়স্ক বা ৬৫ বছর বয়সে অ্যালঝেইমার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ব্ল্যাক কফি পানে অ্যালঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমে।
ক্যান্সার ঝুঁকি দূরে রাখে: গবেষণা অনুযায়ী, কফি পানে কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: কফি পানে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: শরীরের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে লিভার অন্যতম। নিয়মিত কফি পানে লিভার সংক্রান্ত যে কোনো রোগ যেমন- ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, লিভার ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে কফি: যেহেতু কফি মূত্রবর্ধক হিসেবেই পরিচিত। তাই নিয়মিত কফি পানে শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া এবং টক্সিন পদার্থসমূহ দূর হয়।
ওজন কমায় ব্ল্যাক কফি: ব্ল্যাক কফি শরীরে মেটাবলিজম বাড়ায়। এটি শরীরে চর্বিকে পুড়িয়ে ওজন কমাতে সহায়তা করে। ব্ল্যাক কফি স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং শরীরে চর্বির কোষ ভেঙে ফেলতে পারে।
ব্ল্যাক কফির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
ব্ল্যাক কফি কি আদৌও শরীরের জন্য ভালো? ব্ল্যাক কফি পানে আপনার শরীরেও কিছু সমস্যা দিতে পারে।
* অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি পানে, শরীরে হরমোনের চাপ বেড়ে যায়। ফলে মানসিক চাপ বাড়ে। উদ্বেগ বাড়ে।
* ব্ল্যাক কফি খেলে আপনার ঘুম চক্রে ব্যাঘাত ঘটে। আপনি অনিদ্রাজনিত রোগে ভুগতে পারেন। ডায়েটিশিয়ানরা রাতে শোবার আগে ব্ল্যাক কফি পান করতে নিষেধ করেছেন।
* কফিতে উচ্চ মাত্রায় ক্যাফেইন বিদ্যমান। প্রয়োজনের থেকে বেশি ব্ল্যাক কফি পানে আপনার পেটের সমস্যা হতে পারে। বুক জ্বালা-পোড়া করতে পারে। এমনকি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যও হয়।
* মাত্রাতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি পানে এটি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যেমন- আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং জিংক শোষণ করতে বাঁধা প্রদান করে।
দিনে ৫০-৪০০ মিলিগ্রাম ব্ল্যাক কফি পান করতে পারেন। সকাল ৯টা থেকে ১১ টার মধ্যে ব্ল্যক কফি পান করার উপযুক্ত সময় বলে মনে করা হয়।