আজকের যুগে সবাই চান নিজেকে সময়োপযোগী প্রমাণ করতে। আর এজন্য সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে হয়। তবে আপনি কতটা স্মার্ট এবং গোছানো মানুষ তা প্রমাণ দিতে হলে শুধু নিজেকে পরিপাটি রাখলে হবে না। নিজের পারিপার্শ্বিকটাকেও প্রাধান্য দিতে হবে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো পরা কাপড়গুলো ধুবো-ধুচ্ছি করে জমিয়ে রাখেন। আবার অনেকে রাতে খাবারের পর থালা-বাসনগুলো সকাল পর্যন্ত সিঙ্কে ফেলে রাখেন। ভেবে দেখুন, এখানে সেখানে ছড়ানো কাপড় পরে আছে, এর মধ্যে অতিথি চলে এলো। অতিথির কথা বাদ দিন, সকাল বেলা রান্নাঘরে ঢুকে সিঙ্কের এঁটো বাসনগুলোর দিকে তাকালে সুন্দর একটা সকাল কি শুরু হতে পারে কখনো? এলোমেলো ঘরদোর শুধু দেখতেই অসুন্দর না, এতে কাজের ধারাবাহিকতাও নষ্ট হয়। কাজের ঝক্কি বাড়ে, এনার্জি নষ্ট হয়। আপনার ঘর পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিনই কিছু রুটিন মেনে চলুন।
১. সকালে উঠেই বিছানা গুছিয়ে ফেলুন। বিছানা গোছাতে অনেকেই হয়তো আলসেমি করে বলেন, ‘একটু পর গোছাবো’। দেখা যায়, অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় শোবার গর এলোমেলো পড়ে থাকে অনেক বেলা পর্যন্ত। চাদর, বালিশ বা কম্বল এলোমেলো করে না রেখে ঘুম থেকে উঠার সঙ্গে সঙ্গেই ঝটপট গুছিয়ে ফেলুন। এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।
২. রান্না করার খাবার অন্য পাত্রে তুলে রান্নার পাত্র ধুয়ে ফেলুন। খাবারের পর যার যার থালা-বাসন তাকে ধুয়ে ফেলতে বলুন। সেটা দুপুর বা রাতের খাবারই হোক কিংবা চা-নাস্তার ছোট খাটো বাসন। এতে সিঙ্কে কখনোই বাসন জমে থাকবে না। প্রত্যেকবেলা এরকম নিয়ম সবাই সবার কাজটা করলে গৃহিণীর একার ওপর চাপ কমে যায়। তাছাড়া পুরো বাড়িটাকে গুছিয়ে রাখাও সহজ হয়।
৩. অনেক সময় দেখা যায়, অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই আমরা আমাদের শোকেস বা আলমারিতে ঠাসাঠাসি করে রেখে দেই। হতে পারে তা নস্ট ঘড়ি, কোনাভাঙা চায়ের কাপ, দশ বছরেও পরেননি এমন কাপড়-চোপড়। বছরের পর বছর সেগুলো পড়ে থাকার ফলে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ঢাকা পড়ে যায় এবং কাজের সময় আসল জিনিস খুঁজে পাওয়া যায় না। এগুলো পরিষ্কার করাও একঘেয়ে এবং কষ্টকর কাজ। একদিন সময় করে অব্যবহৃত জিনিসগুলো বেছে নিয়ে সেগুলো বিদায় করুন। যে কাপড়গুলো আর পরার সম্ভাবনা নেই সেগুলো কাউকে দিয়ে দিন। বাড়তি জিনিস বিদায় করার পর দেখবেন আপনার নিজেরই কেমন হালকা লাগছে।
৪. বাড়ির আসবাবপত্র সীমিত রাখুন। মেঝেতে খালি জায়গা রাখার চেষ্টা করুন। আধুনিক মিনিমাল ডিজাইনের আসবাব দিয়ে ঘর সাজালে তা দেখতে সুন্দর দেখাবে এবং পরিষ্কার করাটাও সহজ হবে। প্রতিদিনের ধুলো-ময়লা সরাতে হালকাভাবে ঝেড়ে ফেলুন। তবে পনেরো দিনে বা মাসে একবার সবকিছু ভালো ভাবে পরিষ্কার করা জরুরি। শুধু আসবাব না, মাথার ওপর সারাক্ষণ চলতে থাকা ফ্যানগুলোর পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও খেয়াল রাখুন। একইসঙ্গে ঘরের জানালার কাঁচ, দরজাগুলোও পরিষ্কার করতে হবে।
৫. আপনার বাড়ির সবচেয়ে ছোট ঘর ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার করুন। সবসময় শুকনো রাখার জন্য এক্সজস্ট ফ্যান রাখুন। হালকা সুগন্ধ তৈরির জন্য ভালোমানের এয়ার ফ্রেসনার রাখুন। এছাড়া জিনিসপত্র এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে না রেখে গুছিয়ে রাখার জন্য দেয়ালে শেলফ ব্যবহার করুন। শুধু শ্যাম্পু, সাবান, ব্রাশ, পেষ্ট না, বাড়তি টয়লেট টিস্যু, বাড়তি তোয়ালে রাখার জন্যও এই স্টোরেজগুলো কাজে দেয়।
বাড়িতে হঠাৎ অতিথি এলে বাসাবাড়ি গুছানো বা পরিচ্ছন্ন না থাকলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই সবসময় চেষ্টা করুন বসার ঘর, খাবার ঘর অন্তত একটু বেশিই গুছিয়ে রাখতে। আসলে ঘরদোরের পরিচ্ছন্নতা যখন আপনার দিনের সব কাজের মতো রুটিন হয়ে যাবে তখন এমনিতেই সাজানো-গোছানো মনে হবে সবকিছু। শুধু অতিথির জন্য না, নিজের স্বস্তির জন্যই নিজের বাড়িটাকে পরিচ্ছন্ন রাখুন।