গাছপালা, ফুল, লতা-পাতা কে না ভালোবাসে? কিন্তু ইট-কাঠ-পাথরের এই শহরে মন খুলে বাগান করার মতো পরিসর ক’জনের আছে! তারপরও শখ পূরণ করতে ছোট্ট বারান্দায়, ছাদে অনেকেই বাগান করেন। কেউ ভালোবাসেন ফুল, কেউ আবার ঘরের প্রয়োজন মেটানোর জন্য লাগান শাক-সবজি।
চলে এসেছে বর্ষাকাল। গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত সময় এটাই। তবে এ সময় গাছের জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। বিশেষ করে বর্ষাকালে ছাদের টবের গাছগুলোর সুরক্ষার জন্য বিশেষভাবে যত্নবান হতে হয়। যত্ন না নিলে টানা বৃষ্টিতে ভিজে গাছের নানান সমস্যা হতে পারে। বর্ষায় বাগানের পরিচর্যা কীভাবে করবেন সে বিষয়ে জেনে নিন কিছু তথ্য।
* বৃষ্টির পানিতে থাকা পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফেট ও নাইট্রেট আয়রন গাছের জন্য খুবই উপকারী। তাই আলাদা করে এই সময়ে পানি না দেওয়াই ভালো। এতে গাছের গোড়া পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
* যেসব গাছের জন্য পানি বেশি প্রয়োজন, সেগুলো এমন স্থানে রাখুন যাতে বৃষ্টির পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পায়।
* ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট বর্ষার দিনে বাসার ভিতরে বা বারান্দায় এমন জায়গায় রাখবেন যেন পানি না পড়ে। কারণ মরুভূমির গাছ হওয়াতে অতিরিক্ত পানি পড়লেই এগুলো মরে যায়।
* বর্ষায় আপনার বাগান সবসময় ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কেননা, অতি বর্ষণের জন্য পোকা-মাকড় বাগানে আশ্রয় নিতে পারে।
* বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে, ভেজা আবহাওয়ায় বাগান, ছাদ বা টবের গাছের গোড়ায় শ্যাওলা ও পরজীবী উদ্ভিদ জন্ম নিতে পারে। এসব পরজীবী গাছের খাদ্যরস শুষে নিয়ে গাছের ক্ষতি করতে পারে। তাই এসব পরিষ্কার করতে হবে।
* বারান্দা বা ছাদে গাছ রাখার আগে টবের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা বেশ জরুরি। কেনা টবে ফুটো করা থাকে। যারা বাসায় থাকা প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে টব বানান, তাতে ছোট ছিদ্র রাখতে ভুলবেন না।
*একটি টব থেকে আরেকটি টবের মাঝে যেন কিছুটা ফাঁক থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ বেশি ঘন করে টব রাখলে পোকামাকড় আশ্রয় নেওয়ার আশঙ্কা থাকে।
* বৃষ্টির পানিতে থাকা প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গাছের বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। তাই আলাদা করে সারের প্রয়োজন হয় না। তবে অর্গানিক সার যেমন- চা পাতা, ডিমের খোসা, তরকারির খোসা এসব দিতে পারেন।
* বর্ষার কিছু আগেই গাছগুলো ট্রিম করে নিন। এতে বর্ষায় গাছ বাড়বে এবং দ্রুত ফুলও আসবে। পাশাপাশি গাছ বেশি থাকলে এবং একটার উপর অন্য গাছের পাতা থাকলে তা ছেঁটে দিন। এতে পোকামাকড়ের আনাগোনা কমে।
* অনেক সময় দেখা যায়, মাটির ওপর টব রাখা হলে বৃষ্টির কারণে পিঁপড়া বা কেঁচো সেখানে আশ্রয় নেয়। পরে টবে বা গাছের গোড়ায় স্থায়ী বাসা বানিয়ে আস্তে আস্তে গাছের ক্ষতি করে। তাই বৃষ্টির পরপরই এগুলো নির্মূলের ব্যবস্থা করতে হবে।
* বেশি বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাসে নরম গাছগুলো হেলে পড়ে। তাই খুটিঁ দিয়ে বেঁধে রাখুন। এতে গাছ সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে। হেলে পড়ে যাবে না।
* গাছের জন্য অবশ্যই এঁটেল মাটি ব্যবহার করবেন। এই মাটির পানি শোষণের ক্ষমতা বেশি। নারিকেলের ছোবড়া বা কোকোপিটও ভালো পানি শোষণ করে। এ ছাড়া মাটির উপরে আপনি ছোট নুড়িপাথর দিতে পারেন। এতেও পানি বেশি শোষণ হয় না।
* টানা অনেকদিন বৃষ্টির পরে রোদ উঠলে গাছ যেন পর্যাপ্ত রোদ পায় তা খেয়াল রাখবেন। বেশিদিন ধরে গাছের গোড়া ভেজা থাকলে গাছ পঁচে যায়। রোদ উঠলে গাছের টবগুলো ছাদে নিতে পারেন অথবা বাসায় যেখানে রোদ বেশি পড়ে সেখানে রাখতে পারেন।