ইট-কাঠের বদ্ধ ফ্ল্যাটবাড়িতে, কর্মঘণ্টায় ব্যস্ত অফিসের অভ্যন্তরে সবুজের ছোঁয়া পাওয়ার বিষয়টি একটু দুঃসাধ্যই বটে। তবে ঘরের কোণে বা অফিসের ডেস্কের একপাশে এক টুকরো সবুজের ছোঁয়া পাল্টে দিতে পারে পুরো পরিবেশ। গবেষণায় দেখা গেছে, অফিসে সুপরিকল্পিত সবুজের উপস্থিতি কর্মীদের স্ট্রেস কমায়, কর্মদক্ষতা বাড়ায়। আর বাড়িতে হাউসপ্ল্যান্টের ব্যবস্থা করা গেলে তা হতাশা ও দুশ্চিন্তা অসহনীয় পর্যায়ে যেতে বাধা দেয়। আনন্দের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। চোখ ও মনে শান্তির সঞ্চার করে।
তবে ব্যস্ততার কারণে কিংবা না জানার কারণে অনেকেই এমন সবুজের প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। তাদের জন্যই এমন কিছু গাছের সন্ধান রয়েছে যা লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ এবং খুব স্পর্শকাতরও নয়। হাউসপ্ল্যান্টের জন্য জনপ্রিয় গাছগুলি পোথোস গোত্রের, যেগুলোর খুব বেশি যত্নআত্তির প্রয়োজন হয় না। দৃষ্টিনন্দন পত্রপল্লব নিয়ে কয়েক রকমের পোথোস আমাদের ঘর বা অফিসে এনে দিতে পারে অনাবিল সবুজের ছোঁয়া। গবেষণায় এসেছে, বাড়ি বা অফিসের ভেতরের বাতাস নির্মল রাখতে পোথোস খুবই কার্যকর।
লতাজাতীয় এই পোথোসের অনেক জাত সহজলভ্য। এর মধ্যে রয়েছে ডেভিলস ভাইন, মার্বেল কুইন পোথোস, নিয়ন পোথোস, গোল্ডেন পোথোস, মঞ্জুলা পোথোস, এনজয় পোথোস ইত্যাদি। এমনকি এগুলো লাগানো ও যত্ন করা ইনডোর প্ল্যান্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ। এর পাতাগুলোতে নানা বৈচিত্র্যের সবুজের আভা রয়েছে। সঙ্গে সাদা বা অফ হোয়াইটের কারুকাজও থাকে। এই গাছগুলি আদরযত্নে একটু ঘাটতি হলেই নুয়ে পড়বে না। এতে পোকামাকড় বা রোগবালাইয়ের উপদ্রব হয় না বললেই চলে। এর লতাগুলো দ্রুত বেড়ে ওঠে। ঝুলন্ত বাস্কেট, গাছের স্ট্যান্ড, বইয়ের শেল্ফ, ডেস্কের পাশে, সোফা বা বিছানার কোণে, বারান্দার গ্রিলে একটু ছায়াযুক্ত স্থানে বা কম আলোতে মানিয়ে নিতে পারে এই গাছগুলি।
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বেশ ভালোই জন্মে ও বেড়ে ওঠে এই গাছগুলো। পোথোসকে খুব ঠান্ডায় না রাখাই ভালো এবং সরাসরি রোদ না পেলেও সমস্যা হয় না। এটি রোপণের সময় পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত পাত্র বেছে নিতে হবে। এক থেকে তিন মাস পর একটু জৈবসার দিলে এই গাছ ভালো থাকে। এর ডালপালা ও লতাপাতা কেটে–ছেঁটে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তবে গ্রিল বা দেয়ালজুড়েও বাড়তে দেয়া যায়। ভেজা কাপড়ে পাতাগুলো মুছে নেয়া যেতে পারে মাঝেমধ্যে।
গাছের পাতা হলুদ বা বাদামি হয়ে ঝরে পড়তে থাকলে একটু বেশি পানি প্রয়োগ করতে হবে। যদি রঙের ঔজ্জ্বল্য কমে যায়, তবে আরেকটু আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। আবার গোড়ায় পানি জমে গেলে শিকড় পচে গিয়ে হঠাৎ মরে যেতে পারে গাছ। সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। কালেভদ্রে মিলিবাগের আক্রমণ হলে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল তুলায় লাগিয়ে মুছে নিলেই চলবে। অগ্রভাগের দিক থেকে কেটে এর পুষ্ট একটি লতার অংশের কাটা দিকটি দু–তিন দিন পানিতে চুবিয়ে রাখলেই তাতে শিকড় গজিয়ে ওঠে। ইচ্ছা করলে সবাইকে কাটিং উপহার দিয়ে সবুজের সমারোহ বাড়িয়ে তোলা যায় ঘ রে ও অফিসে। তথ্যসূত্র: গার্ডেনিং ও গার্ডেন অব ড্রিমস