চারদিকের এত অশান্তি, এত উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে সুখী হওয়া কি সহজ বিষয়? সূত্র মেনে কি আসলে সুখী হওয়া যায়? ক্রমাগত শো-অফ, এর-ওর সঙ্গে তুলনা- এসবকিছু এড়িয়ে আড়ালে থাকা ও সুখী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আপনার হতেই পারে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন করবেন কীভাবে? এমনি এমনি কারো জীবনে এই আরাধ্য বিষয়টি চলে আসে না। সুখী হওয়া মূলত একটি অভ্যাসের বিষয়।
আশার খবর হলো, এখন অনেকেই বুঝতে শিখেছেন যে নিজেকে সুখী মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করার চেয়ে নিজে সুখ অনুভব করতে পারাটা অনেক বেশি জরুরি। সবার সঙ্গে এক অস্থির প্রতিযোগিতায় না নেমে বরং নিরিবিলি আর নির্ভেজাল জীবন বেছে নিন। কীভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস জীবন বদলে দিতে পারে। প্রতিদিন সকালে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে এমন কিছু বিষয় ভাবুন, যা আপনাকে কৃতজ্ঞ করে তুলেছে।
এগুলো হতে পারে বড় কিছু (যেমন পরিবার ও সুস্বাস্থ্য) বা ছোট কিছু (যেমন একটি দারুণ কাপ কফি বা মনোরম সূর্যাস্ত)। ইতিবাচক বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া ধীরে ধীরে আপনার মানসিকতা বদলে দেবে।
"আমি যত বেশি কৃতজ্ঞ থাকি, তত বেশি সৌন্দর্য দেখি।" – মেরি ডেভিস
সবার পছন্দের মানুষ হতে যাবেন না
সবার পছন্দের হওয়ার চেষ্টা ধীরে ধীরে আপনার নিজস্ব অনুভূতির ক্ষতি করতে পারে। তা কর্মক্ষেত্রে, বন্ধুদের সঙ্গে বা অনলাইনে হোক না কেন, অন্যদের খুশি করার ইচ্ছা আপনাকে নিজস্ব চাহিদা এবং মূল্যবোধ উপেক্ষা করতে বাধ্য করতে পারে। সত্য হলো, সবাই আপনাকে পছন্দ করবে না এবং এটাই স্বাভাবিক। নিজের প্রতি সৎ থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এমনকী অন্যরা একমত না হলেও।
অগ্রাধিকার
প্রতিদিন আমাদেরকে ডেডলাইনস, মেসেজ, ইভেন্ট, মতামত এবং পরামর্শ ইত্যাদি পার করতে হয়। কিন্তু সবকিছুরই প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন হয় না। যখন আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার কাছে আসলে কী গুরুত্বপূর্ণ- আপনার মূল্যবোধ, লক্ষ্য এবং অগ্রাধিকার কী, তখন এমন কিছুকে না বলা সহজ হয় যা কেবল ঝামেলা তৈরি করে। যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ তার ওপর মনোনিবেশ করলে তা চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হতাশ হবেন না
কঠোর চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে নির্দিষ্ট ফলাফলের জন্য বেশি আকাঙ্ক্ষা থাকা অনেক সময় হতাশার কারণ হতে পারে। প্রকল্প, সম্পর্ক, বা একটি লক্ষ্য যাই হোক না কেন, সেটি কীভাবে পরিণত হবে তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে আপনার সেরাটা করার দিকে মনোনিবেশ করুন। সবকিছু সবসময় পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে না। এটি সহজে মেনে নিলে অনেক বেশি মানসিক শান্তি পেতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমিয়ে দিন
সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের নিখুঁত জীবনযাপন দেখে আমরা নিজস্ব জীবনকে ভুলভাবে দেখতে শুরু করি। অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করলে আপনার আত্মবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং অন্যায্য প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। অনলাইনে থাকার পর যদি হতাশ বোধ করেন, তাহলে সেখানে সময় কম খরচ করা শুরু করুন। প্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিন। আপনার মন ভালো থাকবে।
সবকিছুতে সাড়া দেবেন না
আপনাকে প্রতিটি মতামত বা মন্তব্যের প্রতি সাড়া দিতে হবে না। সবকিছু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করলে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে বিরতি নেওয়ার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে যখন সেগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। কখনো কখনো পিছিয়ে আসা মানে উপেক্ষা করা নয়- এটি নিজের যত্ন নেওয়া।
শরীর সচল রাখুন
ব্যবসা পরিচালনার সময় দীর্ঘক্ষণ বসে কাটানোর ফলে বুঝতে পারলাম, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হালকা দৌড়ানো, নাচা বা জিমে যাওয়া—যে কোনো ধরনের শারীরিক কার্যক্রম আপনার শরীরে এন্ডোরফিন (সুখের হরমোন) তৈরি করে ও মানসিক চাপ কমায়। আপনার ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যবান ও সুখী থাকার জন্য এটি একটি সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়।
ছোট ছোট জয় উদযাপন করুন
জীবন আসলে ছোট ছোট সাফল্যের সমষ্টি—একটি কঠিন কাজ শেষ করা, এক সপ্তাহের জন্য ব্যায়াম করা বা সময়মতো ঘুম থেকে ওঠা। এই ছোট অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দিন ও উদযাপন করুন। এগুলো স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলুন
আমার উদ্যোক্তা জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল, জীবনে দেওয়া এবং সহযোগিতার গুরুত্ব। এটি হতে পারে পরামর্শ, সময় বা সহায়তা—যেকোনো কিছু। মানুষকে সাহায্য করা শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং নিজের জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় কোনো স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে অংশ নিন, প্রতিবেশীকে সাহায্য করুন বা শুধু কারও কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।