প্রাক্তনকে মেসেজ পাঠানোর দিন আজ

ভুল মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর অনেকই পরবর্তী সময়ে গিয়ে ব্রেকআপ বা বিচ্ছেদ করেন। তবে এক সময়ের প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো বা ভালো স্মৃতি কি আদৌ মন থেকে মুছে ফেলা যায়? অনেকেই হয়তো তা পারেন না। কারণ প্রেম জটিল। কখনও তা সরল, কখনও অজান্তে হৃদয়কে বন্দি করে ফেলে। কখনো তা পূর্ণ হয় না, কখনো বিচ্ছেদ হয়ে যায় অপ্রত্যাশিতভাবে। একসময় যাকে ছাড়া জীবন অচল মনে হতো, সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর তার খোঁজ নেওয়ার আগ্রহ মানুষের ভেতর থেকে হারায় না।

আজ প্রাক্তনকে মেসেজ দেওয়ার দিন। যা সত্যিই বেশ কঠিন কাজ বটে। তবে যে ব্যক্তির সঙ্গে একটি বন্ধন ছিল এবং গভীর বন্ধুত্ব ছিল, সে হঠাৎ করেই আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ নয়। এটি মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের, যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু কখনো কখনো কিছু ভুল হয়ে যায় অথবা অনুশোচনা থেকে যায়। যা হয়তো তাকে আর বলা হয়নি। আজ না নয় বলে দিন। দীর্ঘদিনের আক্ষেপ আজ মিটিয়ে প্রাক্তনকে একেবারেই মাফ করে দিন, ভুলে যান চিরতরে।

যা-ই হোক আজ আগ্রহকে কাজে লাগান। মোবাইলে এসএমএস, মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপের ইনবক্সে প্রাক্তনকে 
একটি ছোট  বার্তা পাঠান। কারণ আজ ‘টেক্সট ইওর এক্স ডে’- প্রাক্তনকে মেসেজ পাঠানোর আন্তর্জাতিক দিবস। 

প্রতিবছর ৩০ অক্টোবর পালিত হয় দিবসটি। আপনি জানলে আরও অবাক হবেন, ১৯৮৮ সাল থেকে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। তখন অবশ্য প্রযুক্তি এতোটা উন্নত ছিল না। বেশিরভাগ মানুষ চিঠিপত্রের মাধ্যমেই প্রাক্তনের খোঁজ নিতে তখন।

এরপর ১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর এসএমএস মেসেজিংয়ের মাধ্যমে নিল প্যাপওয়ার্থ নামক ২২ বছর বয়সী একজন পরীক্ষা প্রকৌশলী বিশ্বের প্রথম পাঠ্যবার্তা পাঠান। তিনি একটি ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহার করেছিলেন এই মেসেজ পাঠাতে। ২০০৭ সালের পর থেকে মোবাইল ফোনে টেক্সট মেসেজিং যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে ওঠে।

আর এখন তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মেসেজিং অপশন আছে। যার মাধ্যমে দূর-দুরান্তের সবার সঙ্গেই মুহূর্তে যোগাযোগ করা যায়। আপনিও যদি প্রাক্তনকে মিস করেন বা তার সম্পর্কে কৌতূহল থাকেন, তাহলে আজই কিন্তু সেরা দিন তার খোঁজ নেওয়ার।

এই দিবসের শুরুটা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো একক ব্যক্তি বা সংগঠনের নামে নথিভুক্ত নয়। ধারণাটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারনেট কালচারের অংশ হিসেবে উঠে আসে। আনুমানিক ২০১০-এর পর থেকে টুইটার, রেডিট ও ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়, যেখানে ব্যবহারকারীরা একে অন্যকে মজার ছলে চ্যালেঞ্জ করত ‘আরে, পুরোনো প্রেমিক/প্রেমিকাকে টেক্সট করো, দেখি কী হয়!’

পরে কিছু ব্লগ, রোমান্টিক কমিউনিটি, ও অনলাইন ডেটিং প্ল্যাটফর্ম মজার কনটেন্ট হিসেবে দিনটিকে প্রচার করতে শুরু করে। এরপর থেকে প্রতি বছর ৩০ অক্টোবর দিনটি বিশ্বের অনেক জায়গায় ‘মিম দিবস’ হিসেবে উদযাপিত হতে থাকে। যদিও বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ায় এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচলিত নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর উল্লেখ দেখা যায়, এবং মানুষের কৌতূহলও রয়েছে যথেষ্ট।

তবে প্রাক্তনকে মেসেজ করা যুক্তিযুক্ত নাকি ঝুঁকিপূর্ণ? দুটি দিকই আছে। অনেকের কাছে এটি যুক্তিযুক্ত মনে হয়। কারণ অনেক সম্পর্ক হুট করে ভেঙে যায়, কথাগুলো শেষ হয় না। কেউ উত্তর না দিয়ে চলে যায়, কেউ হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সময়ের পরে একটি ছোট বার্তা-‘আশা করি ভালো আছ’ হয়তো দু’জনকেই মানসিকভাবে হালকা করে দিতে পারে।

কেউ কেউ অনুভব করে, সম্পর্কটা শোধরানো সম্ভব নয়, কিন্তু কৃতজ্ঞতা বা ক্ষমা চাওয়া সম্ভব। এই দিনটি সেই সুযোগ তৈরি করে। আসলে সব প্রেম তো আর তিক্ততায় শেষ হয় না। কেউ কেউ আবার বন্ধুতে ফিরে যেতে পারেন। যোগাযোগ পুনরায় শুরু হলে সম্পর্ক নতুনভাবে গড়ে উঠতে পারে, রোমান্টিক না হলেও মানুষের জায়গায়।

অনেকে আবার মনে করেন এতে ঝুঁকি আছে। পুরোনো ক্ষত নতুন করে জাগতে পারে। মনের উপর তো কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। হতে পারে পুরোনো সম্পর্ক আবার শুরু করলেন। তাতে আবারো দুঃখ পাওয়ার ভয় থেকেই যায়। প্রয়োজনহীন যোগাযোগ কারও মনে আঘাত দিতে পারে।

তবে আপনার ভেতরেও যদি কখনো প্রাক্তনের খোঁজ নেওয়ার ইচ্ছা কাজ করে, আজ সেই ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। হয়তো একটি ছোট্ট মেসেজ, স্মৃতির কথা মনে করানো বা শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে দুজনের মধ্যেকার সম্পর্কের বন্ধন আবারও কোমল হয়ে উঠতে পারে।