চল্লিশ পেরিয়েছে, খাবারে এসব উপাদান আছে তো?

প্রকৃতির নিয়মে বয়স বাড়ে। আপনি চাইলেও বয়সের পরিবর্তনগুলোকে একেবারে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না। ঠিক তেমনি বয়সের অংক চল্লিশ পেরুলেই শরীর-মনে এক ধরনের পরিবর্তন শুরু হয়। একধাপ থেকে অন্য ধাপে যাওয়ার এই যাত্রার শুরুটাই হচ্ছে চল্লিশ। 

এই সময়ে কী ঘটে? শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমতে থাকে। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও হাড়-ভঙ্গুর রোগ-সহ নানান জটিলতা দেখা দিতে শুরু করে। ফলে এই বয়সে নিজেকে সুস্থ রাখাটা ভীষণ জরুরি। 

কিছু পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ থাকাটা খানিকটা নিশ্চিত করা যায়। বয়সের এই পর্যায়ে কিছু খাবার অনেকটা ওষুধের মতো কাজ করে।

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের  পুষ্টিবিদ ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অ্যাশলে লার্সেন বয়স বৃদ্ধির সাথে কয়েকটি খাবার নিয়মিত গ্রহণের পরামর্শ দেন। খাবারগুলো হচ্ছে -

আঁশ বা ফাইবার
প্রতিদিন পূর্ণ শষ্য ও সবজি খাওয়ার মাধ্যমে পর্যাপ্ত আঁশ গ্রহণের বিষয়টি  নিশ্চিত করা যায়। উদ্ভিজ্জ আঁশ হজমতন্ত্রের উন্নতি ঘটায়, প্রদাহ কমায়, অবসাদ কমাতে, স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজার রাখতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের মারাত্নক অসুস্থতা যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আইবিএস ও ‘কোলন’ ক্যান্সার থেকেও আমাদের দূরে রাখতে পারে আঁশ জাতীয় খাবার। আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়া থেকে রক্ষা করে।

ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস
আপনি কি এক বেলা খাবারে মাছ, স্ন্যাক্স হিসাবে  বাদাম খান?  তাহলে আপনার  প্রতিদিনের ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস এর চাহিদা পূরণ হয়ে গেলো বলা যায়। এই পুষ্টি উপাদান মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করতে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের তৈলাক্ত মাছ, আখরোট, তিসির বীজ, সয়াবিন থেকে মিলবে এই পুষ্টি উপাদান।

ক্যালসিয়াম
মজবুত হাড় ও দাঁতের জন্য প্রয়োজন ক্যালসিয়াম একথা আমরা সবাই জানি। যে কোনো ধরনের দুগ্ধজাত খাবার ও পালংশাক ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে পারে। নারীদের মেনোপজের পর হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এজন্য ১৯ থেকে ৫০ বয়সি নারীদের প্রতিদিন ১ হাজার মি.লি.গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। বয়স পঞ্চাশ পেরুলে প্রতিদিন ১২শ’ মি.লি.গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে বলা হয়।

এই পরিমাণটা ঠিক রাখতে হলে প্রতি বেলায় উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার যেমন- দুধ, দই  পাতা শাকসবজি খেতে হবে। 

প্রোটিন
সাধারণত দেহের ওজন ও কাজের পরিমাপের ওপর প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা নির্ভর করে। পুষ্টিবিদ লার্সেন বলেন, “বেশিরভাগ নারীর দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়।”

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে পেশির যে ক্ষয় শুরু হয় তা যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণের মাধ্যমে এড়ানো যায়। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে- চর্বিহীন (মুরগি) মাংস, সামুদ্রিক খাবার, ডিম, মটর, ছোলা, বাদাম, বীজ, সয়া ইত্যাদি।

ভিটামিন ডি
ক্যালসিয়াম শোষণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে প্রয়োজন হয় ভিটামিন ডি।

লার্সন জানান, ১৫ থেকে ৭০ বয়সি নারীদের দৈনিক ১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি প্রয়োজন। খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করা সম্ভব হয় না সবসময়। এজন্য বিকল্প পন্থায় অভাব পূরণ করতে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন।

ফাইটোইস্ট্রোজেন্টস
বাদাম, সয়াবিন্স ও সবজিতে  এই রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায়। এই উপাদান  হৃদরোগ, প্রদাহ ও আলৎঝাইমার’স রোগ প্রতিহত করতে কাজ করে।

পাশাপাশি ত্বক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নতিতেও ভূমিকা রাখে। এছাড়া মেনোপজের পরবর্তী অন্যতম সমস্যা 'হট ফ্ল্যাশ' বা অতিরিক্ত ঘাম  হওয়ার সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।