দিনের বেশিরভাগ সময় যারা অফিসে কাটান, বিশেষত কর্পোরেট বা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তিরা, তাদের কাজের চাপ ও একটানা বসে থাকার অভ্যাস বাড়িয়ে দিচ্ছে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষ্য পূরণের তাগিদে দৈনন্দিন সুস্থ রুটিন ব্যাহত হচ্ছে, যা নীরবে ডেকে আনছে জীবনযাত্রাজনিত এই রোগটিকে।
লন্ডন প্রবাসী চিকিৎসক কর্ণ রাজন অফিসের কর্মীদের মধ্যে দেখা যায় এমন ৫টি মূল অভ্যাস চিহ্নিত করেছেন, যা তাদের ক্রমশই ডায়াবেটিসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অফিসের কর্মীদের মধ্যে থাকা এই অভ্যাসগুলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে থাকা
অফিসের কাজের চাপে কর্মীরা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা একটানা বসে থাকেন, যা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যায়। সম্প্রতি এক বিজ্ঞানী এটিকে নতুন ধূমপান এর মতো ক্ষতিকর বলেছেন। এই নিষ্ক্রিয়তা শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে। ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রা ভাঙতে না পারায় তা বাড়তে থাকে, যা ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
কাজের চাপে পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে অনেকেই ডেস্কেই প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খান। এই খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত ক্যালোরি, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা ওজন বাড়ায় এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়।
পর্যাপ্ত বা অনিয়মিত ঘুম
কাজের চাপ অথবা রাতে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে অনেকেরই রাতে পর্যাপ্ত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম হয় না। অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ইনসুলিনের সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
সকালের নাস্তা না করা
অফিসে পৌঁছানোর তাড়া বা সময় বাঁচানোর জন্য অনেকেই সকালের নাস্তা না করেই কাজে চলে যান। দীর্ঘ সময় পেট খালি থাকলে ইনসুলিনের কাজ ব্যাহত হয়। ইনসুলিন কাজ না করতে পারলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
অফিসের লক্ষ্য পূরণের চাপ থেকে তৈরি হয় তীব্র মানসিক চাপ, যা শরীরের হরমোনাল প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
মানসিক চাপ কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন সরাসরি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় এবং একইসাথে অস্বাস্থ্যকর মিষ্টি ও নোনতা খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে তোলে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, কাজের ফাঁকে অন্তত প্রতি এক ঘণ্টায় একবার জায়গা ছেড়ে উঠে হাঁটাচলা করুন। এছাড়াও, প্রাতরাশ বাদ দেবেন না এবং কাজের চাপ সামলানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানোর ব্যবস্থা নিন।
এই অভ্যাসগুলি পরিবর্তন করে অফিসে কাজ করা ব্যক্তিরা ডায়াবেটিসের মতো গুরুতর জীবনযাত্রাজনিত রোগ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারেন।