হঠাৎ কানে শুনতে না পাওয়া সমস্যাকে আমরা অনেক সময় অবহেলা করে থাকি, যা মোটেও ঠিক নয়। কারণ অবহেলায় একেবারেই হারিয়ে যেতে পারে আমাদের শ্রবণশক্তি।
কানের স্ট্রোক সর্ম্পকে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ। চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
কানের স্ট্রোক কী ও কেন হয়
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, স্ট্রোক বলতে আমরা সাধারণত ব্রেইন স্ট্রোককেই বুঝি। যদি মস্তিষ্কের টিস্যুতে অক্সিজেন কমে যায় আর সে কারণে রক্তনালী যদি বন্ধ হয়ে যায় অথবা রক্তনালী ছিঁড়ে যায় তাহলে মস্তিষ্কের যে স্থানে অক্সিজেনের ঘাটতি হচ্ছে সেই স্থানের টিস্যু নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এতে করে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। বড় অংশ জুড়ে টিস্যু নিষ্ক্রিয় হলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে আর ছোট অংশে হলে মাইনর স্ট্রোক হয়।
তবে ইদানিং কানের স্ট্রোক কথাটি শুনতে পাওয়া যায়। আসলে কানের স্ট্রোক কী সেটি সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন।
হঠাৎ করে দুই কানে বা এক কানে কিছইু শুনতে পান না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে 'সাডেন সেন্সরিনিউরাল হিয়ারিং লস' বলে। অর্থাৎ হঠাৎ করে কান একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া, কানে কিছুই শুনতে না পাওয়ায় সমস্যাই 'সাডেন সেন্সরিনিউরাল হিয়ারিং লস' বা কানের স্ট্রোক।
কানে স্ট্রোক কেন হয় এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবু হানিফ বলেন, কানের ভেতরের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ভেস্টিবুলার এবং ককলিয়া। ভেস্টিবুলারের মূল কাজ হচ্ছে ভারসাম্য রক্ষা করা। যে কারণে ভেস্টিবুলারে কোনো সমস্যা হলে মানুষের মাথা ঘোরায়, অনেক সময় ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যায়।
আর কানের ভেতরে শামুকের মত প্যাঁচানো অংশটি হচ্ছে ককলিয়া, যার মূল কাজ শব্দ শোনা। শ্রবণশক্তির জন্য অপরিহার্য হচ্ছে ককলিয়া। যে কথাগুলো আমরা বলি সেই শব্দ বা কম্পন বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ দিয়ে শেষ পর্যন্ত অন্তঃকর্ণের ককলিয়ারে পৌঁছায়। ককলিয়ার অংশে থাকা বিশেষ কোষ হেয়ার সেইলস এই কম্পন অনুভব করে এবং স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মানুষ শুনতে পায়।
যে রক্তনালি ধমনী দিয়ে ককলিয়াতে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন যায় সেটি যদি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায়, ব্লক হয়ে যায় তখন সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। আর অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে ককলিয়া নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। ককলিয়া কাজ করতে না পারার কারণে মানুষ শুনতে পায় না। এটিকেই কানের স্ট্রোক বলা হয়।
এছাড়া কানের ভেতরের অংশে রক্তনালি অনেক সময় সংকুচিত হয়ে যায়। রক্তনালির মধ্যে যদি প্লাটিলেট প্লেগ জমে যায় তবে ওই রক্তনালি ব্লক হয়ে যেতে পারে। কোনো কারণে যদি ভাইরাল সংক্রমণ হয় তাহলেও কানে স্ট্রোক হতে পারে। মূল কথা হচ্ছে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়া, ব্যাহত হওয়ার কারণে হেয়ার সেলগুলো মরে যায়, নিষ্ক্রিয় যায়। এর ফলে মানুষ কানে শুনতে পায় না এবং 'সাডেন সেন্সরিনিউরাল হিয়ারিং লস' বা কানের স্ট্রোক হয়।
কানের স্ট্রোক যেকোনো বয়সেই হতে পারে। সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়।