ঢাকা
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ভালো পুরুষকে চিনবেন যেভাবে

আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৮ পিএম

সময়ের পরিবর্তনে মানুষের মূল্যবোধও বদলাচ্ছে। কিন্তু ‘ভালো পুরুষ’- এই শব্দ দুটি আজও ঠিক একইভাবে মর্যাদা বহন করে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, কিছু স্বতঃসিদ্ধ আচরণ ও গুণ দেখেই বোঝা যায় একজন পুরুষ কতটা পরিণত, দায়িত্বশীল এবং বিশ্বাসযোগ্য।

এদিকে আধুনিক জীবনের দৌড়ঝাঁপে সত্যিকারের ‘ভালো পুরুষ’ খুঁজে পাওয়া যেন অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজ লক্ষণ দেখেই বোঝা যায়- কেমন মানুষটি সত্যিই মূল্যবান। 

আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিশ্ব পুরুষ দিবস। পুরুষ সমাজের অর্ধেক, তবে তাদের ভূমিকা, দায়িত্ব, মানসিক চাপ ও সংগ্রামের অনেকটাই অদৃশ্য থাকে সবার চোখেই। এজন্য সমাজে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ করার জন্য দিবসটির সূচনা হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে পুরুষের আচরণ, নেতৃত্ব, দায়িত্ব ও সম্পর্কের ধরন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। 

একজন ভালো পুরুষ পৃথিবীর সৌভাগ্যের অংশ। বিশ্ব পুরুষ দিবস উপলক্ষে আমাদের উচিত তাদের সেই মানবিক মুখটি স্মরণ করা, যাঁরা পরিবার, বন্ধু ও সমাজকে সমৃদ্ধ করে। তো, একজন ভালো পুরুষকে আমরা কীভাবে চিনব? কী গুণে তিনি পরিবার, সমাজ ও সম্পর্কের শক্ত ভিত্তি হয়ে ওঠেন? 

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক একজন ভালো পুরুষের ১০টি লক্ষণ- 

১. সম্মান- যা তার চরিত্রের প্রথম পরিচয়

একজন ভালো পুরুষ কথা বলার আগে ভেবে বলেন, কাউকে ছোট করেন না। না নারীকে, না সন্তানকে, না সহকর্মীকে।
কারও অবস্থান বা পেশাকে হেয় করে দেখেন না। তিনি জানেন সম্মান দেওয়া মানেই নিজের মান-সম্মান বাড়ানো। সম্মান শুধু বয়স বা পদমর্যাদা দিয়ে নয়, মানুষের মর্যাদা দিয়ে তৈরি হয়। পরিবারে হোক, কর্মস্থলে হোক বা অপরিচিত মানুষের সাথে—তার ব্যবহার খুবই মার্জিত, ভদ্র এবং ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি বুঝেন শক্তি দেখানো যায় চিৎকারে নয়, আচরণে।

২. দায়িত্ব নেন, দায় এড়ান না

একজন ভালো পুরুষের আচরণে দায়িত্বশীলতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি কোনো কাজ ফেলে রাখেন না এবং অজুহাত দেখান না। পরিবার হোক, কর্মক্ষেত্র হোক বা সামাজিক দায়িত্ব—সব ক্ষেত্রেই তিনি নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। এমন দায়িত্ববোধ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা তৈরি করে। শুধু অর্থ উপার্জন নয়, মানসিক ও সামাজিক দায়িত্বও তিনি সমান গুরুত্ব দিয়ে পালন করেন।

৩. আবেগ প্রকাশে সচেতন

অনেকে মনে করেন পুরুষ মানেই কড়া ও আবেগহীন। কিন্তু একজন ভালো পুরুষ জানেন আবেগ প্রকাশ করা দুর্বলতা নয়। তিনি রাগ, কষ্ট বা হতাশা চাপা দেন না; প্রয়োজন হলে সহায়তা চান। এ স্বচ্ছতা তাঁর সম্পর্ককে করে সুস্থ ও মজবুত।

৪. ভুল স্বীকার করতে জানেন

ভুল করা মানুষই করে, কিন্তু ভুল স্বীকার করা বড় কথা। একজন ভালো পুরুষ তার ভুল স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না। তিনি জানেন, ‘সরি’ বলা কোনো অপমান নয়, বরং পরিপক্বতার পরিচায়ক। এটি তাঁকে অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

৫. সঙ্গীর স্বপ্নের প্রতি সমর্থনশীল

ভালো পুরুষ নিজের সাফল্যকে একা দেখে না। তিনি সঙ্গীর স্বপ্ন ও স্বাধীনতাকে সমান গুরুত্ব দেন। সঙ্গীর সাফল্যে তিনি ঈর্ষান্বিত হন না, বরং গর্বিত হন। পরিবার ও সমাজে এমন সমর্থনশীল মনোভাব সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।

৬. আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্যশীলতা

অযথা রাগ বা হিংসায় প্রভাবিত হন না। চাপের মুহূর্তে তিনি আবেগে ভেসে সিদ্ধান্ত নেন না। তিনি জানেন, এক মুহূর্তের ভুল সিদ্ধান্ত জীবনভর ক্ষতি করতে পারে। তাই তাঁর আচরণ শান্ত, সংযত এবং পরিণত।

৭. প্রতিশ্রুতির প্রতি নিষ্ঠাবান

প্রতিশ্রুতির প্রতি তাঁর নিষ্ঠা দৃঢ়। তিনি কোনো কথাই ফেলে রাখেন না। পরিবার, বন্ধু বা কর্মক্ষেত্রে তাঁর ওপর সব সময় ভরসা করা যায়। কথার মর্যাদা রাখা, এটি একজন ভালো পুরুষের স্বভাব।

৮. নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা

ভালো পুরুষ কখনো আত্মতুষ্ট হন না। তিনি প্রতিদিন শিখতে চান, ভুল থেকে শিক্ষা নেন, অভ্যাস ও চরিত্র উন্নত করেন। নিজের উন্নয়নকে জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন। এটি শুধু তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে উন্নত করে না; পরিবারের ও সমাজের জন্যও তিনি আরও মূল্যবান হয়ে ওঠেন।

৯. নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল

ভালো পুরুষ নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা বজায় রাখেন। তিনি নারীর স্বাধীনতা, মতামত ও ক্যারিয়ারকে সমান গুরুত্ব দেন। কোনো অবস্থাতেই তিনি নারীর মর্যাদায় আঘাত হানেন না। সমাজে নারীর সমানাধিকারের পক্ষে তিনি দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান।

১০. পরিবার ও বন্ধুত্বের মূল্যায়ন

একজন ভালো পুরুষ জানেন ক্যারিয়ার গুরুত্বপূর্ণ হলেও পরিবার ও প্রিয় মানুষদের সময় দেওয়া আরও জরুরি। তিনি পারিবারিক দায়িত্ব ভাগ করে নেন, সন্তানদের যত্ন নেন, বন্ধুদের পাশে থাকেন। বাড়ির কাজ, বাজার বা রান্না—এ দায়িত্বগুলো তিনি যৌথ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থাকেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ভালো পুরুষ জন্মগত নয়- আচরণ, মূল্যবোধ, শিষ্টাচার ও দায়িত্ববোধে তৈরি হয়। সমাজ আজ এমন পুরুষদেরই বেশি প্রয়োজন- যারা সম্মান, সততা ও মানবিকতার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকে।

LH/FJ
আরও পড়ুন