সকালে ঘুম থেকে ওঠার সেরা সময় কোনটি?

সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঠিক সময় নিয়ে বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দীর্ঘদিনের গবেষণা রয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন ভোরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারলে শরীর ও মন দুই-ই চাঙ্গা থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদী সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়।

ভোর ৫টা থেকে ৬টা ৩০: আদর্শ সময়

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে ৬টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘুম থেকে ওঠা শরীর এবং মনের জন্য সবচেয়ে উপকারী। এই সময় শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ি বা সার্কেডিয়ান রিদম (Circadian Rhythm) সূর্যের আলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে, যা হরমোনের ভারসাম্য, শক্তি স্তর এবং সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

প্রাকৃতিক ছন্দের গুরুত্ব

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যোদয়ের কাছাকাছি সময়ে জাগলে শরীরের সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক থাকে। এই প্রাকৃতিক ছন্দ বজায় থাকলে ক্লান্তি, মানসিক চাপ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা কমে আসে। অন্যদিকে, যারা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন, তাদের প্রাকৃতিক ছন্দে বিঘ্ন ঘটে, যার ফলে দিনের বেলায় ক্লান্তি ও মনোসংযোগে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সকালের নির্মল পরিবেশ ও উপকারিতা

ভোর ৫টা থেকে ৬টা ৩০ এর মধ্যে পরিবেশ শান্ত ও নির্মল থাকে। এই সময়ে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে শুরু করে। তাই এই সময়কে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়ামের জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়। এতে দিনভর কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং মানসিক প্রশান্তি আসে। অনেক সকালে ওঠা ব্যক্তিরা প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে পারেন এবং শহরের কোলাহল থেকে দূরে এক স্নিগ্ধ সময় কাটাতে পারেন।

পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, কখন উঠছেন তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি পর্যাপ্ত ঘুম নিচ্ছেন কিনা। রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে যদি ভোর ৫টা-৬টার মধ্যে ওঠা যায়, তবে শরীরের সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক থাকে এবং ঘুম সম্পূর্ণ হয়। যারা দেরিতে, অর্থাৎ সকাল ৯টা-১০টা পর্যন্ত ঘুমান, তারা প্রায়শই সারা দিন ক্লান্তি, বিরক্তি এবং মনোসংযোগে সমস্যায় ভোগেন। এমন অভ্যাস খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের সময়ের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যা শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লককে ব্যাহত করে।

দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি

অতিরিক্ত দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। যদিও প্রতিটি মানুষের শরীরের নিজস্ব ঘড়ি কিছুটা আলাদাভাবে কাজ করে, তবুও গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সূর্যোদয়ের সময় ঘুম থেকে ওঠেন, তারা সাধারণত অধিক সক্রিয়, ইতিবাচক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন।

দিল্লি এইমস-এর নিউরোলজিস্ট ডাঃ অরবিন্দ গুপ্তা এই মত সমর্থন করে বলেছেন, রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে ভোর ৫টা-৬টার মধ্যে ওঠা শরীরের সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা হার্ট, মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায়, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং কর্মক্ষম দিন কাটাতে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে, তবে তা পর্যাপ্ত ঘুমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যক। সূত্র- নিউজ ১৮