মানসিক চাপ এই শব্দটাই এখন প্রায় সবার জীবনের অংশ। কিন্তু নিউরোসায়েন্টিস্ট ডা. শ্বেতা আদাতিয়া মনে করেন, মানসিক চাপ কমাতে সবসময় বড় কোনো পরিবর্তনের দরকার নেই; বরং দিনের শুরুটাতেই যদি একটু সচেতন হওয়া যায়, তাতেই অনেক কিছু বদলে যেতে পারে। ভারতীয় নিউরোসায়েন্টিস্টে ডা. আদাতিয়া এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছে।
তিনি জানান মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মাত্র একটি অভ্যাস যথেষ্ট। প্রতিদিন সকালের শুরুটা কীভাবে করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. আদাতিয়া বলেন, সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হবে যদি আপনি সকালে জেগে ওঠার ধরনটা বদলান। আপনি যেভাবে দিন শুরু করেন, সেটাই ঠিক করে দেয় আপনার মনের ভারসাম্য। ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়ো করবেন না। অফিস বা কোথাও যাওয়ার হলে শেষ মুহূর্তে জাগবেন না আর জেগেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওইয়া যাবে না একাবারেই। ঘুম থেকে উঠেই কোনও কাজ শুরু করলে মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে। তাই সকালে কয়েক মিনিট সময় নিন। ধীরে ধীরে শরীর ও মনকে জাগিয়ে তুলুন।
তিনি আরও বলেন, এই প্রক্রিয়াটা সময়সাপেক্ষ নয়। এটা কোনো কঠিন বা দীর্ঘ সময়ের মেডিটেশন নয়। মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট দিন নিজের জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। এটাই সারাদিনে আপনার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে।
কেন তাড়াহুড়ো করে দিন শুরু করা ক্ষতিকর
মনোবিদ গুরলিন বারুয়া জানান, আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি, তখনও শরীর গভীর নিদ্রা থেকে ধীরে ধীরে জাগ্রত অবস্থায় আসছে। এই সময় শরীরে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা বেড়ে যায়, যাতে আমরা সতর্ক হতে পারি। কিন্তু ঠিক তখনই যদি আমরা ইমেইল দেখা, মিটিংয়ে ছোটা বা কাজের ব্যস্ততায় ঝাঁপিয়ে পড়ি, তাহলে স্নায়ুতন্ত্র মুহূর্তের মধ্যে শূন্য থেকে শতকে পৌঁছে যায়। মস্তিষ্কের নিজের ভারসাম্য ফিরে পাওয়ার সময়ই থাকে না ফলে শক্তি বাড়ার বদলে আমরা ক্লান্ত, বিরক্ত বা বিভ্রান্ত অনুভব করি।তিনি সতর্ক করেন, এই হঠাৎ সক্রিয় হওয়া অবস্থা দীর্ঘদিন চললে স্ট্রেস, মনোযোগের ঘাটতি ও বার্নআউটের ঝুঁকি বাড়ে।
আলফা ও থিটা অবস্থান
ডা. আদাতিয়া আলফা ও থিটা অবস্থার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে মনোবিদ গুরলিন বারুয়া বলেন। তিনি জানান, আলফা হলো শান্ত অথচ সতর্ক অবস্থা, যেমন হালকা মেডিটেশন বা দিবাস্বপ্নের সময়। থিটা হলো গভীর সৃজনশীল বা চিন্তাশীল অবস্থা, যা ঘুম আর জাগরণের মাঝামাঝি ঘটে। এই দুই অবস্থা বজায় রাখতে সকালে তাড়াহুড়ো না করে কিছু সময় নীরবে কাটানোই সবচেয়ে কার্যকর।
মোবাইল স্ক্রিনে চোখ না রেখে কিছু সময় স্ট্রেচিং, হালকা লেখা বা নিঃশব্দে বসে থাকার অভ্যাস করুন। এতে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে জেগে ওঠে, এবং মন সারাদিনের জন্য প্রস্তুত হয়।
বারুয়া বলেন, একটু বিরতি মানেই স্ট্রেস রিসেটের সুযোগ। উদাহরণ হিসেবে ‘বক্স ব্রিদিং’ খুব কার্যকর ৪ সেকেন্ড শ্বাস নিন, ৪ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ৪ সেকেন্ড ছাড়ুন, আবার ৪ সেকেন্ড বিরতি দিন। এভাবে কয়েক মিনিট করলেই স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয়। গাইডেড মেডিটেশন, মাইন্ডফুল জার্নালিং, কিংবা কয়েক মিনিটের জন্য রোদে বসে থাকা এই ছোট কাজগুলোও শরীরকে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তোলে, মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
দিনের শুরুটা সময় নিয়ে শুরু করুন। কোনো কিছু দ্রুত করতে গিয়ে মানসিক অবসাদ, মানসিক চাপ না বাড়ানোই ভালো। ঠিক মতো ঘুমান সেই সঙ্গে জেগে উঠেও একটু নিজেকে সময় দিন এতেই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস