কেন কিছু মানুষ ভূমিকম্প টের পান না

ভূমিকম্প হলে অনেকে আতঙ্কে ছুটে বেরিয়ে আসেন, আবার অনেকেই পরে জানতে পারেন যে কম্পন হয়েছে-কিন্তু তারা কিছুই টের পাননি। একই এলাকার মানুষ হওয়া সত্ত্বেও অনুভূতির এই পার্থক্যের কারণ কী? সাম্প্রতিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায় পাওয়া গেছে এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কারণ।

ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম মাত্রার ভূমিকম্পে সবাই কম্পন অনুভব করেন না। বিশেষ করে ভবনের উচ্চতা, তার কাঠামো, একজন ব্যক্তি সেই মুহূর্তে কী অবস্থায় আছেন—এসবই ভূমিকম্প টের পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়া মানুষের শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে ভবনের কাঠামো, আবহাওয়া, এমনকি মানুষের মানসিক অবস্থাও—সব মিলিয়ে ভূমিকম্প অনুভব করার সক্ষমতা ভিন্ন হয়।

মৃদু ভূমিকম্প সবাই কেন টের পায় না

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩.৫ এর নিচের মাত্রার বেশিরভাগ ভূমিকম্পই মানুষ সহজে টের পায় না। এর বড় কারণ হলো ভূকম্পন তরঙ্গের শক্তি মানুষের অনুভূতির নিচে থেকে যায়।

গবেষণা অনুযায়ী, মৃদু ভূমিকম্পে কম্পন এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে একজন ব্যক্তি স্থির দাঁড়িয়ে থাকলে অনুভব করতে পারেন, কিন্তু অন্য কেউ হাঁটাচলা বা কাজে ব্যস্ত থাকলে সেটি বুঝতে পারেন না।

কিছু মানুষ ভূমিকম্প টের পায় না কেন

মানুষ ভূমিকম্প টের না পাওয়ার প্রধান ৭টি কারণ

ভবনের কাঠামো কম্পন শোষণ করে ফেলে

কিছু ভবন এমনভাবে নির্মিত যে ছোট কম্পন দেয়ালের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। স্টিল-ফ্রেমড বিল্ডিংয়ে কম্পন কম অনুভূত হয়, আর পুরোনো ভবনে তা বেশি হয়।

কিছু মানুষ ভূমিকম্প টের পায় না কেন

নিচতলায় কম্পন কম পৌঁছায়

ভূমিকম্পের সময় ভবনের উপরের অংশ সবচেয়ে বেশি দুলে। নিচতলায় কম্পন অনেকটাই শোষিত হয়ে যায়। ফলে নিচে থাকা মানুষ কিছুই বুঝতে পারেন না, অথচ উপরের তলার বাসিন্দারা আতঙ্কে বেরিয়ে আসেন।

চলাফেরা করলে কম্পন বোঝা যায় না

যদি কেউ হাঁটেন, দৌড়ান, রান্না করেন বা শারীরিক কাজে ব্যস্ত থাকেন—তবে শরীরের ইতিমধ্যেই চলমান নড়াচড়ার মধ্যে ভূমিকম্পের ক্ষুদ্র কম্পন আলাদা করে অনুভব করা কঠিন।

কিছু মানুষ ভূমিকম্প টের পায় না কেন

মানুষে মানুষে সংবেদনশীলতার পার্থক্য

সব মানুষের নার্ভ সেনসিটিভিটি এক নয়। কেউ বাতাসের দোলা পর্যন্ত টের পান, আবার কেউ মাঝারি কম্পন না হলে বুঝতে পারেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট বয়সের পরে অনেকেরই ভেস্টিবুলার সেন্সর সংবেদন কমে যায়।

পরিবেশগত শব্দ কম্পন ঢেকে দেয়

গাড়ির শব্দ, ফ্যান, ইঞ্জিন, মেশিন, নির্মাণ কাজ—এসব কম্পনের কারণে প্রকৃত ভূকম্পনকে আলাদা করে বুঝতে অসুবিধা হয়। অনেক সময় মানুষ ভেবে বসেন—এটা হয়তো পাশের গাড়ির ভাইব্রেশনই।

কিছু মানুষ ভূমিকম্প টের পায় না কেন

গভীর ঘুমে থাকা বা মনোযোগে ডুবে থাকা

ভূমিকম্পের সময় কেউ যদি গভীর ঘুমে থাকে, ফোনে ব্যস্ত থাকে, বা খুব মনোযোগ নিয়ে কাজ করে—তালে ক্ষুদ্র কম্পন সচেতন মস্তিষ্কে পৌঁছায় না।

ভবনের উপাদান ও মাটির ধরন

নরম মাটিতে ভবন বেশি দোলে, ফলে কম্পন বেশি অনুভূত হয়। শক্ত মাটিতে থাকা ভবনে কম্পন অনেক কম লাগে। তাই একই এলাকায় মাটির গঠন ভেদে অনুভূতির পার্থক্য দেখা যায়।

এদিকে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট কম্পন অনুভব না করাটা কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু যদি এলাকায় বারবার ছোট কম্পন হয় এবং মানুষ তা বুঝতে না পারেন, তাহলে এটি বড় ভূমিকম্পের আগে প্লেট অস্থিরতার লক্ষণও হতে পারে। তাই তারা নিয়মিত নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।