পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ

পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ১২২তম জন্মদিন আজ। অসংখ্য কালজয়ী কবিতা ও গানের রচয়িতা পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। একাধারে তিনি কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক। বাংলা সাহিত্যে তার সৃষ্টি গ্রাম-বাংলার রূপ-বৈচিত্র, শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কথা বলে। গ্রামীণ জনপদে মানুষের জীবনযাত্রায় সুখ-দুঃখ, কান্না-হাসির চিত্র বরাবর সাহিত্যে তুলে এনেছেন জসীমউদ্দীন। যা পাঠক হৃদয়ে আজও মুগ্ধতা ছড়ায়। ভূষিত হয়েছেন 'পল্লীকবি' উপাধিতে।

বাংলা কবিতার মূল ধারাকে নগর সভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব এই পল্লীকবির। সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার দৃঢ় সমর্থক কবি জসীমউদ্দীন পূর্ব পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক আন্দোলনেরও অন্যতম পুরোধা। জসীমউদ্দীন রচিত নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট গীতিময় কবিতার অন্যতম। এছাড়া ‘আমার হার কালা করলাম রে, আমায় ভাসাইলি রে, বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে...’ ইত্যাদি কবির লেখা পল্লীগীতি এখনো বেঁচে আছে বাংলার মানুষের মুখে মুখে।

পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আনসার উদ্দিন মোল্লা পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তার মায়ের নাম আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট।

কবি জসীমউদ্দীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে পাঁচ বছর তিনি শিক্ষকতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে ১৯৪৪ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে প্রথমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং এরপর পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। সবশেষে ১৯৬২ সালে কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

কবি জসীমউদ্দীন রচিত -

গ্রন্থাবলি: রাখালী, নকশী কাঁথার মাঠ, বালুচর, ধানখেত, সোজন বাদিয়ার ঘাট, পাখি, রূপবতী, মাটির কান্না অন্যতম।

সংগীত গ্রন্থ: রঙিলা নায়ের মাঝি, গাঙের পাড়, জারি গান, মুর্শিদী গান অন্যতম।

নাটক: পদ্মা পার, বেদের মেয়ে, মধুমালা, পল্লীবধূ, গ্রামের মেয়ে, ওগো পুস্পধনু, আসমান সিংহ অন্যতম।

প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী কবি জসীমউদ্দীন ১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্টের প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার, ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক ও ১৯৭৮ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। তবে ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কবি জসীমউদ্দীন। 

১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে বিদায় নেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। সে সময় তার শেষ ইচ্ছায় তাকে ফরিদপুরের অম্বিকাপুর গ্রামে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।