একাত্তরের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় যশোর-ফেনীসহ ৬ জেলা

আজ ৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের রক্তঝরা এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল দেশের ৬টি জেলা- যশোর, কুড়িগ্রাম, ফেনী, ঝিনাইদহ, সুনামগঞ্জ ও লালমনিরহাট। চূড়ান্ত বিজয়ের ১০ দিন আগেই মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ অভিযানে এসব এলাকার আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা।

মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে এদিন বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি সেনারা।

যশোর

একাত্তরের ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ের তীব্র লড়াই চলে। পাকিস্তানি বাহিনী চৌগাছা ও যশোর সেনানিবাসে শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। তবে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে তারা। ৫ ডিসেম্বর থেকেই হানাদার বাহিনী পালাতে শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী যশোর সেনানিবাস দখল করে নেয়। এদিন শহর মুক্ত হলেও জনশূন্য থাকায় বিজয় মিছিল হয় পরদিন ৭ ডিসেম্বর। এটি ছিল দেশের প্রথম শত্রুমুক্ত হওয়া জেলাগুলোর অন্যতম।

কুড়িগ্রাম

দীর্ঘ ২৩৪ দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলে থাকার পর ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয় কুড়িগ্রাম। এদিন বিকেল ৪টায় মুক্তিবাহিনীর ‘কে ওয়ান এফএফ’ কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল হাই সরকারের নেতৃত্বে ৩৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা বীরদর্পে শহরে প্রবেশ করেন। তারা শহরের নতুন ওভারহেড পানির ট্যাংকের ওপর স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তির আনন্দে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানায়।

ফেনী

রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ৬ ডিসেম্বর সকালে মুক্ত হয় ফেনী। মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে শহরে প্রবেশ করেন। এই লড়াইয়ে প্রায় ১৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২০০ জন আহত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা পালিয়ে যায়।

ঝিনাইদহ ও লালমনিরহাট

মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয় ঝিনাইদহ ও লালমনিরহাট। ঝিনাইদহে আকাশপথে বোমা হামলা ও স্থলপথে জোরলো লড়াইয়ের পর হানাদাররা শহর ত্যাগ করে। অন্যদিকে লালমনিরহাট ও এর আশেপাশের উপজেলাগুলোতেও যৌথ অভিযানের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্ত হওয়ার পর এসব এলাকায় আনন্দ মিছিল ও পতাকা উত্তোলন করা হয়।

সুনামগঞ্জ

মুক্ত দিবসের ভোরে সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে প্রবেশ করতে থাকেন। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের খবর পেয়ে আগের রাতেই শহর ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। ৬ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢুকলে সাধারণ মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। দিনটি স্মরণে শহরে পতাকা উত্তোলন ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।