৪৭ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি:

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের সম্পত্তি দখলের তৎপরতা চলছে

গাইবান্দার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল নারীকে লাঞ্ছিত করা ও তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ও অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান তারা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালীরা গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের সম্পত্তি দখলের তৎপরতা চলাচ্ছে।

বিবৃতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নিজেরা করি'র সমন্বয়ক খুশি কবীর, টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো ড. স্বপন আদনান, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা, ব্যারিস্টার সারা হোসেনসহ ৪৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক স্বাক্ষর করেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের উপর প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলের নেতা বা তাদের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা সাঁওতালদের ভূসম্পত্তির দখল নিতে তৎপর থেকেছে । কখনও রাষ্ট্র তাদের জমি কেড়ে নিয়েছে চিনিকলের নামে আবার কখনও পুলিশ প্রশাসন তাদের বাড়ী ঘরে আগুন দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। সেইসাথে স্থানীয় বাঙালী প্রভাবশালীরা তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের বাড়ী ঘর দখল করার ফন্দি-ফিকির বাস্তবায়ন করেছে।’

‘আজ দেশ যখন সকল বৈষম্যের শৃংখল ভাঙ্গার দাবিতে সোচ্চার তখন সাঁওতালদের উপর এমন অন্যায় অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা তীব্রতম ভাষায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। লাঞ্ছিত নারী ফিলোমিনা হাঁসদার উপর শারীরিক নির্যাতন এবং ব্রিটিশ সরেনের বাড়ীতে অগ্নি সংযোগের নিরপেক্ষ  তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’

খবরে প্রকাশ, গত ৩ জানুয়ারি সকালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রাজাবিরাট এলাকায়  ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের ভোগদখলীয় জমিতে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন মাটি ভরাট শুরু করলে কয়েকজন যুবক তাতে বাধা দেন। তখন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন নেকোলাস মুর্মুর নামের এক যুবককে মারধর করে।

খবর পেয়ে ব্রিটিশ সরেন নামের আরেক যুবক প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান তাকেও লাঠি দিয়ে মারধর করার হুমকি দেয়। এ সময় ব্রিটিশ সরেনের মা ফিলোমিনা হাঁসদা চেয়ারম্যানের লাঠি ফেরাতে গেলে চেয়ারম্যান তাকেও আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনার জের ধরে ওইদিন রাত ১১টায় ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে চেয়ারম্যানের লোকজন আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র, কাপড় ও টিনের চালসহ সব কিছু পুড়ে যায়। এ ঘটনার পর দিন ৪ জানুয়ারি গোবিন্দগঞ্জ থানায় স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ২৫ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়।