জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। দাবি আদায় না হলে ভোট বর্জনেরও হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল।
সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে থেকে কার কতটুকু অংশগ্রহণ থাকবে তার প্রস্তাবও তুলে ধরেন প্রদীপ কুমার পাল।
তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১২ শতাংশ জনসংখ্যা অনুপাতে ৩৫০ আসন হলে ৪২টি আসন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। ৩৮টি হিন্দুদের জন্য, বৌদ্ধ ৩টি, খ্রিষ্টানদের জন্য ১টি আসন এবং ৬টি মহিলা আসন থেকে ৪টি হিন্দু, ২টি বৌদ্ধদের জন্য।’
‘সারাদেশের প্রাপ্ত ভোট অনুসারে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সদস্য মনোনীত করবে। এতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, আদিবাসী ও খ্রিষ্টান সংসদ সদস্যরা সমমর্যাদা সম্পন্ন হবেন। ভোট দেবেন স্ব-স্ব সম্প্রদায়ের ভোটাররা।’
রাজনৈতিক দলগুলো কখনই এদেশের জনসংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে মনোয়ন দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি হিসাব মতে ১২ শতাংশ সংখ্যালঘু হলেও তাদের ৪২টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু যৌথ নির্বাচনের কারণে স্বাধীনতার ৫৫ বছরে কোনো সংসদেই হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি পাঠাতে পারেনি। বিএনপি থেকে মাত্র ১ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ২-৩ জন, আওয়ামী লীগ থেকে প্রায় ১৫ জন এমপি হতে পেরেছে। আগামীর পার্লামেন্ট হিন্দু শূন্য বা নামেমাত্র ২-১ জন থাকার সম্ভবনা রয়েছে।’
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ স্থানীয় সরকারসহ সবক্ষেত্রে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার যৌক্তিক কারণসহ প্রস্তাব সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে করেছে বলে জানান প্রদীপ কুমার পাল।
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় দুটি কমিশনই হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি ও প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেছে। কমিশন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছে সেখানে উচ্চ বা নিম্ন কক্ষ কোনো জায়গাতেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা রাখেনি। তাই বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় কমিশন কর্তৃক প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।’
গত ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধানরা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দীনবন্ধু রায় বলেন, পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের আর কোনো দাবি নেই। তাদের এই দাবি মানা না হলে ভোট বর্জন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সহসভাপতি নিতাই দে সরকার, যুগ্ম মহাসচিব বিশ্বনাথ মোহম্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোর কুমার বর্মন ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা প্রতিভা বাক্চী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য সহ-সভাপতি দুলাল কুমার মন্ডল, তরুণ কুমার ঘোষ, নিতাই দে প্রমুখ।