জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মূহাম্মদ ইউনূস। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটে সফরসঙ্গীদের নিয়ে তার বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির ছয়জন প্রতিনিধি থাকছেন। এর মধ্যে পাঁচজন একই ফ্লাইটে যাচ্ছেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। আরেক প্রতিনিধি জামায়াতের ড. নকিবুর রহমান তারেক যুক্ত হবেন নিউইয়র্কে।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাকছেন ছয়জন উপদেষ্টা। গৃহায়ণ উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ একই ফ্লাইটে যাচ্ছেন। অগ্রগামী টিমের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান যোগ দেবেন ২৪ সেপ্টেম্বর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের এক উপদেষ্টাকে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হেনস্তার চেষ্টা করার ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টার সফরে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনস্যুলার জেনারেল অফিস স্থানীয় পুলিশ, মেয়র অফিস ও ফরেন সার্ভিসকে চিঠি দিয়েছে। এতে নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকায় বিক্ষোভ ঠেকানোর উপায় নেই। তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভ হবেই, এটা ধরে নিচ্ছি। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিউইয়র্ক পুলিশ প্রস্তুত থাকবে। এনওয়াইপিডি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ।’
প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে এবং সম্ভাব্য অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিমানবন্দর, হোটেল ও জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা গণজমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও তাদের সমর্থকেরা সেখানে বিক্ষোভ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক জানান, আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা প্রধান উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করতে পারে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এজন্য বাড়তি নিরাপত্তার অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ড. ইউনূস ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এতে তিনি জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সংস্কার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় এবং সাবেক স্বৈরাচারী শাসনের পর বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরবেন।
এ ছাড়া সফরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাইডলাইনে কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের অবস্থানও তুলে ধরবেন। ড. ইউনূসের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করবেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি নিজে। প্রধান উপদেষ্টার ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।