ইসলামে ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদত পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব। তবে আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য অর্জনের জন্য নফল ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। যদিও নফল ইবাদত না করলেও গুনাহ নেই, তবু এগুলোই বান্দাকে আল্লাহর প্রিয় করে তোলে।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরজ আমল দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে। এরপর সে নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার আরো কাছাকাছি হয়, এমনকি আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে; চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে; হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে; পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে যদি কিছু চায়, আমি তা দান করি। যদি আশ্রয় চায়, আমি তা প্রদান করি।’ (সহিহ বুখারি: ৬৫০২)
কেয়ামতের দিন বান্দার আমলনামায় প্রথম হিসাব হবে নামাজের। যাদের ফরজে ঘাটতি রয়েছে, তা নফল নামাজ দিয়ে পূরণ করা হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘নামাজ সঠিক হলে সে সফল হবে। আর নামাজে ত্রুটি থাকলে সে ব্যর্থ হবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন— দেখো, বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কি না, যার দ্বারা ফরজের ঘাটতি পূরণ করা যায়।’ (তিরমিজি: ৪১৩)
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত :
নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, দোহা, আওয়াবিন ইত্যাদি)
কোরআন তেলাওয়াত ও শিক্ষা দেওয়া
নফল রোজা (বিশেষত আরাফা, আশুরা, শাবান, সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা)
দরুদ শরিফ পাঠ
জিকির ও তাসবিহ
মাসনুন দোয়া পাঠ
সদকা ও দান
রোগী দেখতে যাওয়া ও সেবা করা
কবর জিয়ারত
সালামের প্রসার
সর্বদা অজু রাখা
সৎ নিয়তে প্রতিটি কাজ করা
হাসিমুখে মানুষের সঙ্গে কথা বলা
সর্বোত্তম নফল ইবাদতের স্তরবিন্যাস :
হাদিসসমূহ ও ইসলামি স্কলারদের ব্যাখ্যানুযায়ী মহান আল্লাহর কাছে অনেক দামী—এমন নফল ইবাদতের ধাপগুলো হলো-
১. নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, দোহা, আওয়াবিন)
২. কোরআন তেলাওয়াত
৩. জিকির ও তাসবিহ-তাহলিল
৪. দান-সদকা
৫. নফল রোজা
(সূত্র: শুআবুল ঈমান: ৩/৫১৮; মিরকাতুল মাফাতিহ: ৪/৬৭৩, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৪/৫৪১)
আল্লাহর নৈকট্য, ভালোবাসা ও জান্নাত লাভের উত্তম পন্থা হলো বেশি বেশি নফল ইবাদত করা। বিশেষ করে ফরজের ঘাটতি পূরণের জন্য নফল ইবাদত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নিয়মিতভাবে নফল ইবাদত করার তাওফিক দিন। আমিন।