আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত কুসংস্কার হলো, বিয়ের পর মেয়েরা চুড়ি, নাকফুল না পরলে অমঙ্গল হয়, স্বামীর ক্ষতি হয় বা আয়ু কমে যায়। তাই বিয়ের পরে স্ত্রীর সব সময় চুড়ি ও নাকফুল পরে থাকা বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এ রকম ধারণা ভ্রান্ত, মনগড়া কুসংস্কার। কারো এ রকম বিশ্বাস থাকলে তা ত্যাগ করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের আয়ু নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে কারো মৃত্যু হবে না।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘কোনো প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মারা যায় না। প্রত্যেকটির নির্দিষ্ট সময় লিখিত আছে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৪৫)
এই আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, মানুষের আয়ু নির্ধারিত এবং তা অলঙ্কার পরা বা না-পরার মতো বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘মাতৃগর্ভেই নবজাতকটি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগা, রিজিক ও বয়স কত তা লিখে দেয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ৩১৮)
এই হাদিস থেকে জানা যায়, মানুষের আয়ু আল্লাহ তাআলা মাতৃগর্ভে অবস্থানকালেই নির্ধারণ করে দেন। সুতরাং অলঙ্কার পরিধানের সঙ্গে আয়ুর কোনো সম্পর্ক নেই।
ইসলামি স্কলারদের মতামত
বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি তার ‘তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম‑এ বলেন- ‘ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোনো ভিত্তি নেই। আয়ু ও রিজিক আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত বিষয়। এসব অলঙ্কার পরিধান করা বা না করা স্বামীর আয়ু বা জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না।’ (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৪৫)।
অলঙ্কার পরিধানের বিধান
নারীরা সৌন্দর্য ও স্বাভাবিক রুচির প্রকাশ হিসেবে সোনা-রুপাসহ যেকোনো ধাতুর অলংকার ব্যবহার করতে পারবে। তবে সোনা-রুপা ছাড়া অন্য ধাতু দ্বারা তৈরি অলংকার ব্যবহার করা মাকরুহে তাহরিমি। হ্যাঁ, যদি সোনা-রুপার প্রলেপ বা মিশ্রণ থাকে তাহলে সেগুলোও বৈধ। (আবু দাউদ: ৪২২৩ ও ৪২২৪; ফতোয়া হিন্দিয়া: ৫/৩৫৯; ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ১৬/১৭৬)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (স.) এক ঈদের দিন বের হলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। আগে-পরে কোনো নামাজ পড়লেন না। তারপর বেলালকে (রা.) সঙ্গে নিয়ে নারীদের কাছে গেলেন। তাদেরকে উপদেশবাণী শোনালেন এবং সদকা করতে উৎসাহ দিলেন। তখন নারীরা তাদের কানের দুল এবং হাতের চুড়ি খুলে দিতে লাগলেন। (সহিহ বুখারি: ১৪৩১)
এটি প্রমাণ করে যে মহিলারা অলঙ্কার পরিধান করতেন; তবে এটি অমঙ্গল এড়ানোর জন্য নয়, বরং সৌন্দর্য ও স্বাভাবিক রুচির প্রকাশ হিসেবে।
শেষ কথা, ইসলামের দৃষ্টিতে চুড়ি-নাকফুল পরা বা না পরা সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। এগুলোর সঙ্গে স্বামীর অমঙ্গল বা আয়ু হ্রাসের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলামে নারীদের অলঙ্কার পরিধান করাকে আবশ্যক করা হয়নি। অলঙ্কার পরিধান করতে উৎসাহও দেয়া হয়নি, এটাকে ফজিলতপূর্ণ বা মুস্তাহাবও বলা হয়নি। নারীরা তাদের ইচ্ছা ও রুচি অনুযায়ী অলঙ্কার পরিধান করতে পারেন, নাও করতে পারেন। অলঙ্কার পরিধানের জন্য নাক-কান ফোঁড়াতে পারেন, নাও ফোঁড়াতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নেই, নির্দেশ বা উৎসাহও নেই। কুসংস্কার নয়, বরং কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন গঠন করাই একজন মুসলমানের দায়িত্ব।