এআই প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারে বিশ্বজুড়ে ব্যবহার, প্রতিযোগিতা ও বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে এর ফলে মানুষের চাকরি হারানোর আশঙ্কাও বাড়ছে। মাইক্রোসফটের এক গবেষণায় জানা গেছে, এআই-ভিত্তিক চ্যাটবটের কারণে ৪০ ধরনের চাকরি হুমকির মুখে।
চ্যাটজিপিটি’র মতো এআই চ্যাটবটের কারণে মানুষ চাকরি হারাবে- এমনটা সরাসরি না বললেও মাইক্রসটের গবেষণা জানাচ্ছে, মানুষের পরিচিত কিছু চাকরি খাত এআই’র দখলে চলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির চ্যাটবট বা এআই অ্যাসিসট্যান্ট টুলগুলোর প্রভাব চাকরি ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর বাড়ছে।
এই গবেষণায় মাইক্রোসফট আমেরিকায় তাঁদের কোপাইলট চ্যাটবটের সাথে ২ লাখেরও বেশি বেনামী কথোপকথন বিশ্লেষণ করেছে। বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে এমন কিছু চাকরি খাত যেখানে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে খুব ভালোভাবেই কার্যসম্পাদন সম্ভব। তথ্য প্রক্রিয়াকরণ বা যোগাযোগ-সম্পর্কিত কাজগুলো এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মাইক্রোসফটের কোপাইলট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এআই চ্যাটবটের ব্যবহারযোগ্যতার স্কোরের ভিত্তিতে ৪০টি চাকরি হুমকির মুখে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে শীর্ষ ১০টি খাত।
* দোভাষী এবং অনুবাদক
* ইতিহাসবিদ
* যাত্রী পরিচারক (প্যাসেঞ্জার অ্যাটেনডেন্ট)
* বিক্রয় প্রতিনিধি বা সেলস রিপ্রেজেনটিটিভ (সার্ভিস)
* লেখক
* গ্রাহক সেবা প্রতিনিধি (কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেনটিটিভ)
* সিএনসি (কমপিউটার নিউমেরিক্যাল কনট্রোল) টুল প্রোগ্রামার
* টেলিফোন অপারেটর
* টিকিট এজেন্ট ও ট্রাভেল ক্লার্ক
* সম্প্রচার ঘোষক (ব্রডকাস্ট অ্যানাউন্সার) এবং রেডিও ডিজে
গবেষকরা দেখেছেন যে এই কাজগুলো এআই টুল খুব সহজেই অনুকরণ করতে পারে। এই যেমন সামারি বা সারসংক্ষেপ তৈরি করা, টেক্সট তৈরি ও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। এআই চ্যাটবট বা অ্যাসিসট্যান্ট টুলগুলোর সক্ষমতা ও চাকরির কাজের মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকা স্বত্বেও মাইক্রোসফটের গবেষণা এটা বলছে না যে এআই’র কারণে কতগুলো চাকরি বিলুপ্ত হতে পারে, বা মানুষের হাত থেকে এআই’র হাতে চলে যেতে পারে।
এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক, সবচেয়ে কম ঝুঁকির মধ্যে আছে কোন চাকরিগুলো- অর্থাৎ, সবচেয়ে কম স্কোরধারী চাকরি খাত কোনগুলো। এমন ১০টি চাকরি হলো:
* ড্রেজ অপারেটর
* তালা ও ব্রিজ তৈরি (ব্রিজ এন্ড লক টেন্ডার)
* গৃহকর্মী এবং গৃহস্থালি পরিচ্ছন্নতা কর্মী
* ছাদের কাজ, কংক্রিট ফিনিশার ও মেঝে স্যান্ডার (রুফার্স, কনক্রিট ফিনিশার্স, এন্ড ফ্লোর স্যান্ডার্স)
* ম্যাসাজ থেরাপিস্ট ও ফ্লেবোটোমিস্ট (স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত ব্যক্তি যিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রোগীর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে থাকেন)
* থালাবাসন ধোঁয়া (ডিশওয়াসার) ও রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী (হাইওয়ে মেনটেনেন্স ওয়ার্কার)
* লাইসেন্সপ্রাপ্ত নার্সিং সহকারী ও চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ
এআই প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত সাধারণ মানুষ। অনেকেই এর পক্ষে যুক্তি দেন এভাবে যে, এআই’র কারণে ব্যাপক আকারে উৎপাদন বাড়াবে এবং নতুন চাকরি তৈরি হবে। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, এআই প্রযুক্তির কারণে ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে চাকরি হারাচ্ছেন মানুষ। খোদ প্রযুক্তি বিশ্বেই সংখ্যাটা উদ্বেগজনক। এই প্রেক্ষাপটে মাইক্রসফটের এই গবেষণা নতুন করে ভাববার সুযোগ করে দেয় বৈকি।
তথ্যসূত্র: মাইক্রোসফট