এক শতাব্দী আগে বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে যে ধারণা দিয়েছিলেন, তা এত দিন মহাকাশ গবেষণার ভিত্তি ছিল। সাম্প্রতিক নিখুঁত পরীক্ষানিরীক্ষায় তার তত্ত্বের অনেক প্রমাণ মিললেও, এবার সেই ধারণার কিছু অংশ ভুল হতে পারে বলে মনে করছেন একদল গবেষক। বিশেষত, ব্ল্যাক হোলের আকার-আয়তন পরিমাপের বিষয়ে আইনস্টাইনের তত্ত্বে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার ধ্রুপদী তত্ত্ব অনুযায়ী, ব্ল্যাক হোল হলো এমন একটি মহাকাশীয় অঞ্চল যেখানে বিশাল পরিমাণ ভর অত্যন্ত ক্ষুদ্র আয়তনে জমা থাকে। এর মহাকর্ষীয় টান এত তীব্র যে আলোও এর থেকে পার পেতে পারে না।
আইনস্টাইন তার সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বে বলেছিলেন, ব্ল্যাক হোলের এই অদৃশ্য অংশের চারপাশে থাকা গ্যাস ও প্লাজমা দিয়ে তৈরি আলোর রিং এবং মাঝখানের কালো ছায়া বা ‘শেডো’ অংশের আকার-আয়তন দেখেই ব্ল্যাক হোলের প্রকৃত আয়তন বোঝা সম্ভব। এই পরিমাপ সম্পূর্ণরূপে অভিকর্ষ বলের ওপর নির্ভরশীল।

ব্ল্যাক হোলের এই ‘ইভেন্ট হরাইজন’ হলো সেই চৌহদ্দি, যার ভেতরে একবার কোনো বস্তু ঢুকে পড়লে তার আর কোনো রেহাই থাকে না তখন কেবলই পতন ঘটে।
ফ্র্যাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুসিয়ানো রেজজোল্লা এবং তার দল আইনস্টাইনের এই পরিমাপ পদ্ধতির ওপর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এই সন্দেহের ভিত্তি হলো ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (EHT) দিয়ে সম্প্রতি তোলা দু’টি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ছবি।
অধ্যাপক রেজজোল্লা এবং তার দল এই ছবিগুলি নিয়ে নিবিড় পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন। সেই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই তাদের দাবি, ব্ল্যাক হোলের ছায়া অংশের আকার-আয়তন নিয়ে আইনস্টাইনের অনুমান ভুল প্রমাণিত হতে পারে।

এই চাঞ্চল্যকর গবেষণাটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’ তে প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও ব্ল্যাক হোলকে সরাসরি দেখা সম্ভব নয়, বিজ্ঞানীরা এর অস্তিত্ব টের পান। ব্ল্যাক হোল যখন কোনো নক্ষত্রের সঙ্গী হয়, তখন প্রবল আকর্ষণে সেই নক্ষত্র থেকে টুকরো অংশ টেনে নেয়। এই অংশগুলো প্রবল মাধ্যাকর্ষণে বলয়াকারে ঘুরতে ঘুরতে ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’ তৈরি করে। এই সব পদার্থ থেকে নির্গত এক্স রশ্মি মহাকাশ দূরবীনে ধরা পড়ে এবং এটিই বিজ্ঞানীদের ব্ল্যাক হোলের আভাস দেয়।
যদি ফ্র্যাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এই দাবি প্রমাণিত হয়, তবে এটি মহাবিশ্ব এবং অভিকর্ষ বল নিয়ে আমাদের শতবর্ষ পুরোনো ধারণাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।
পৃথিবীর আকারের তিন গ্রহের আবিষ্কার