কাককে প্রশিক্ষণ দিয়ে শহরের রাস্তা থেকে সিগারেটের অবশিষ্ট কুড়িয়ে আনার সুইডিশ স্টার্টআপ Corvid Cleaning AB এর অভিনব প্রকল্পটি অবশেষে ব্যর্থ হলো। একসময় বিশ্বজুড়ে শিরোনাম হওয়া এই উদ্যোগটি ২০২৫ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে।
এই প্রকল্পের ধারণাটি ছিল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে কম খরচে শহর পরিষ্কার রাখা। কিন্তু প্রাণী কল্যাণ নিয়ে নৈতিক বিতর্ক এবং কার্যকর তথ্যের অভাবে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ শুরু থেকেই অনিশ্চিত ছিল।
সুইডেনের ছোট এই স্টার্টআপের পরিকল্পনা ছিল কাকের শেখার ক্ষমতাকে কাজে লাগানো। এর ভিত্তি ছিল অপারেন্ট কন্ডিশনিং (Operant Conditioning)। ঠিক যেমন পোষা কুকুর নির্দেশ মানলে পুরস্কার পায়, তেমনি: কাক সিগারেটের অবশিষ্ট তুলে একটি বিশেষ বিনে ফেলবে। ক্যামেরা সেটি শনাক্ত করবে। পুরস্কার হিসেবে মেশিনটি খাবারের পেলেট ছেড়ে দেবে।
ধারণা ছিল, একটি কাক শিখলে অন্যরা তা অনুসরণ করবে এবং খুব কম খরচে শহরের ময়লা পরিষ্কারের একটি দল তৈরি হবে। ২০২২ সালে এই ধারণাটিই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
এই প্রকল্প শুরুর পর থেকেই সুইডেনের গবেষকেরা এর নৈতিক দিক নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, সিগারেটের অবশিষ্টে থাকা নিকোটিন, টার এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকসহ নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক বন্য কাকের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তারা সতর্ক করে বলেন, ‘যদি ক্ষতির সম্ভাবনা পুরোপুরি বাদ দেওয়া না যায়, তাহলে এই প্রকল্প নৈতিক সীমা অতিক্রম করতে পারে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে সুইডেনে সরকারি অর্থায়নে ‘Bird Litter Picking: Nicotine Items and Health’ নামে একটি গবেষণা শুরু হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল কাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের পরীক্ষা এগিয়ে না নিয়ে যাওয়া।
গবেষণার পর থেকেই এই প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে ধীরে ধীরে নীরবতা নেমে আসে। অল্প সংখ্যক কাককে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি ছোট পাইলট প্রকল্প চালু হলেও, এই প্রকল্পের কোনো তথ্যভিত্তিক রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ পায়নি। বাস্তব চিত্রটি ছিল হতাশাজনক। কতগুলো সিগারেট সংগ্রহ হলো, তার কোনো তথ্য মেলেনি।
বিশেষজ্ঞরা মেশিনগুলো কার্যকর ছিল কিনা, বা মানুষের তুলনায় আর্থিকভাবে এটি সত্যিই কম খরচে কাজ দিত কিনা এসবেরও কোনো প্রমাণ পাননি।
সবশেষ নিশ্চিত খবর আসে সুইডেনের কোম্পানি রেজিস্ট্রি থেকে। নথি অনুযায়ী, Corvid Cleaning AB ২০২৫ সালের অক্টোবরে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। নথিতে দেখা যায়, কোম্পানিটির কোনো কর্মী ছিল না এবং আয় ছিল মাত্র ৭ হাজার সেক (প্রায় ৭৫০ ডলার)। কাক-নির্ভর পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার বিশ্বব্যাপী স্বপ্ন আর বাস্তবায়নের পথে ছিল না এই সংস্থা।
এক্সে চালু হলো ‘অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে’ ফিচার
ইলন মাস্ককে ‘সবকিছুতে সেরা’ বলছে গ্রোক 