কীভাবে এত ধনী হলেন মুকেশ আম্বানি? 

ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির প্রাক-বিয়ের অনুষ্ঠানে মহা আয়োজন করে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন ভারতের ধনকুবের বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি। কী ছিল না এই বিয়েতে। অতিথি হয়ে এসেছিলেন বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গসহ বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরা। একমঞ্চে নেচেছেন বলিউডের তিন খান- শাহরুখ খান, আমির খান ও সালমান খান। পারফর্ম করেছেন রিয়ানার মতো পপতারকা।

কথায় আছে, টাকা থাকলে বাঘের দুধ পাওয়া যায়! ছেলের এই প্রাক-বিয়ের অনুষ্ঠানে যেন তা-ই করেছেন মুকেশ আম্বানি। এই অনুষ্ঠানের পর থেকে আম্বানি যেন বিশ্ব মিডিয়ার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছেন। তিনি কেমন ধনী উঠছে সে প্রসঙ্গও। ব্লুমবার্গের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে ১১তম স্থানে আছেন মুকেশ আম্বানি। ১১৪ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক তিনি। সম্পদের দিক থেকে ভারতে মুকেশের অবস্থান শীর্ষে। তার ধারেকাছে কেউ নেই।

কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন মুকেশ?
মুকেশের জন্ম ব্যবসায়ী পরিবারে। তার বাবার নাম ধীরজলাল হিরাচন্দ আম্বানি, তবে ধীরুভাই আম্বানি নামেই বেশি খ্যাত। তার হাতেই গড়ে ওঠে ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শিল্পপ্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। তবে শুরুর পথটা এতটা মসৃণ ছিল না।

ধীরুভাইয়ের বড় ছেলে মুকেশ ২০ বছর বয়সে তার ছোট ভাই অনিলের সঙ্গে বাবার সুতা ও মশলার ব্যবসায় যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে টেক্সটাইল এবং কাপড় তৈরির কৌশল রপ্ত করে ফেলেন। গতিশীল করেন রিলায়েন্স গ্রুপকে। ১৯৯০-এর দশকে মুকেশ রিলায়েন্স কোম্পানিকে পেট্রোকেমিক্যাল এবং পরিশোধন ব্যবসার দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখেন। ২০০০ সালের দিকে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ খুচরা বাজার ও টেলিকম বাণিজ্যে প্রবেশ করে। পটলগঙ্গায় রিলায়েন্সের প্রথম উল্লেখযোগ্য উৎপাদন প্রকল্প এবং জামনগরে বিশ্বের বৃহত্তম পরিশোধন কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠায় এই ধনকুবেরের অবদান উল্লেখযোগ্য।

সম্পতি ভাগাভাগি নিয়ে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ঝামেলা হয়। আম্বানি পরিবারেও তা-ই হয়েছে। ২০০২ সালে মারা যান ধীরুভাই। এরপরেই মুকেশ ও অনিল দুই ভাই সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ধীরুভাই কোনো উইল না করে যাওয়ায় সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাইয়ের এই ঝামেলা চলেছিল প্রায় ১০ বছর। অবশেষে তাদের মা কোকিলা এই বিবাদ মেটাতে এগিয়ে আসেন।

মা অনিলকে বিদ্যুৎ, আর্থিক পরিষেবা এবং টেলিকম বাণিজ্য দেন। এর মূল্য সেই সময়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি ছিল। এদিকে টেক্সটাইল, তেল ও গ্যাস, পেট্রোকেমিক্যাল এবং পরিশোধনের নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় মুকেশকে। মুকেশ আম্বানির অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং অনিল আম্বানির অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো রিলায়েন্স অনিল ধীরুভাই আম্বানি গ্রুপ বা রিলায়েন্স গ্রুপ নামে পরিচিত। 

সম্পদের এই বিভাজনে যুক্ত করা হয় আরও একটি শর্ত। ওই শর্তে মুকেশ ও অনিল- দুই ভাইকে ১০ বছরের জন্য একে অপরের ব্যবসায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ অন্যান্য শিল্পের পাশাপাশি পোশাক, সৌর শক্তি, খুচরা বাণিজ্য, বিনোদন এবং লজিস্টিকসহ অন্যান্য খাতেও প্রসারিত করেছে নিজেদের ব্যবসা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুকেশের তত্ত্বাবধানে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ধীরে ও অবিচলভাবে পৌঁছে গেছে নতুন এক উচ্চতায়।