তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার পথে। ঘড়ির কাঁটা ৪টা ছুঁই ছুঁই। তীব্র তাপপ্রবাহে রাস্তায় থাকা মানুষের শরীর ভিজে যাচ্ছে। আর এমন রোদের মধ্যেই রাজধানীর মগবাজার এলাকায় রাস্তা মেরামতের কাজ করছিলেন মমতাজ বেগম।
সুন্দর নামের প্রশংসা করতেই তার মনে একটু ভালো লাগা কাজ করলো। কিন্তু যখনই প্রশ্ন করলাম এমন প্রখর রোদের মধ্যে রাস্তায় কাজ করতে কষ্ট হয় না? ৫৫ বছর বয়সী এই নারীর এবার একটু মনটা মলিন হলো। তিনি বললেন, কাজ না করলে খাব কি! ঘর ভাড়া দিব কি দিয়ে! ছেলে নেই? আছে। দুই ছেলে। আমি এক ছেলের সঙ্গে থাকি। তার যে বেতন এবং আমি কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়েই সংসার চলে। আর স্বামী? স্বামী নেই। মারা গেছেন। এবার কিছুটা উচ্চ কণ্ঠে কথা বললেন তিনি।
জিজ্ঞেস করলাম, দিনশেষে কত টাকা পান? তিনি বললেন, ৪৫০ টাকা। আর আপনার পাশে আপনার বয়সী যে বৃদ্ধ কাজ করেন, তিনি কত টাকা পান? বললেন, একটু বেশি পান। ৬০০ টাকা। পুরুষ মানুষ তো, তাই একটু বেশি পান। কিন্তু কাজ তো একই করেন। উনি বেশি টাকা পান আর আপনি কম টাকা পান, খারাপ লাগে না? খারাপ লাগে কিন্তু করব কি! কাজ তো করতেই হবে! বাধ্য হয়েই করি।
কথা হয় মগবাজারের পাশেই একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন নারী পরিচ্ছন্ন কর্মীর সঙ্গে। হাওয়া বিবি নামের এই পরিচ্ছন্ন কর্মী জানালেন, তিনি হাসপাতালে কাজ করেন একটি কোম্পানির মাধ্যমে।
দিনে ৭ ঘণ্টা করে কাজ করে মাস শেষে ৭ হাজার টাকা বেতন পান। তিনি জানালেন, এখানে তার সঙ্গে কাজ করা পুরুষ সহকর্মীদের বেতন একটু বেশি।
নারী এবং পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যে মজুরি বৈষম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, বিভিন্ন খাতেই নারী-পুরুষের এই মজুরি বৈষম্যটা আছে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীদের মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি ক্ষুন্ন হতে দেখি। সেই জায়গাতে আমরা দেখি শ্রমিক হিসেবে নারীদের একটা ঠকানোর চেষ্টা। সেটা পরিচ্ছন্ন কর্মী হোক কিংবা অন্য কোনো পেশার হোক।
পুরো বাংলাদেশেই শ্রমিকদের জন্য একটা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি থাকা দরকার বলেও মন্তব্য করেন শ্রমিক নেত্রী তাসলিমা আখতার।