ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

উপকূলে নারীদের সংগ্রামী জীবন

আপডেট : ০৮ জুন ২০২৪, ১১:০৭ এএম

উপকূলের চর কুকরী মুকরীর সংগ্রামী নারী বিলকিস বেগম (২৩), নূরজাহান বেগম (৩৫) ও শিরিন আক্তার (২৪) এরা বহু আগে থেকেই পরিবারের প্রধান। চরফ্যাশনের দক্ষিন উপকূলের মাত্র এই ৩ নারীই নয়, এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে হাজারো নারীর। কারও স্বামী অসুখে মারা গেছেন, কারও স্বামী ফেলে চলে গেছেন, আবার কারও স্বামী দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে সংসারের বোঝা নারীদের কাঁধে। এ কারণে পরিবারে অভাব-অনটন বারোমাস। 

পরিবারের প্রধান দুঃস্থ-অভাবী নারীদের দুঃখ পিছু ছাড়ে না। এখানে ওখানে চেয়েচিন্তে খাওয়া, ধারকর্জ করে চলা, সাহায্যের জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় হাত বাড়ানো তাদের নিত্য সঙ্গী। কখনো আটার রুটি-পায়েশ খেয়ে জীবন ধারণ, কখনো অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটানো।

উপকূলের নারীদের ভাগ্য বিড়ম্বিত, জীবন অবহেলা, বৈষম্য আর নির্যাতনের শিকার নিত্যদিনের। দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সংসারে স্বামীর অনুপস্থিতিতে নারী হয়ে ওঠেন পরিবারের প্রধান। অথচ কোথাও নেই এতটুকু স্বীকৃতি। উপরন্ত আছে যৌতুকের চাপ, তালাকের ভয়। স্বামীর একাধিক বিয়ে। শেষ জীবনেও নারীকে দেয় না স্বস্তি। জীবনের রঙিন দিনগুলোর শুরুতেই বাল্যবিয়ের ভোগান্তির চাপ নারীর কাঁধেই। তবুও নারীকে সইতে হয় নানাবিধ গঞ্জনা। দুর্যোগ এলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বাড়ে নারীর। লঙ্ঘিত হয় অধিকার। 

ভয়াল নদীতে মাছ ধরার মতো পেশায় দেখা মেলে উপকূলের নারীদের। জীবিকার তাগিদে নদীতে গিয়ে স্বামী ফিরে না এলেও নারীকে নামতে হয় জীবন সংগ্রামে।

কুকরী মুকরীর বিলকিস বেগমের স্বামী বাচ্চু মিয়া দুই সন্তান জন্মের পর বিনা নোটিশেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। প্রথম স্ত্রী বিউটি বেগম দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত বলে বিলকিসকে বিয়ে করেন বাচ্চু মিয়া। কিন্তু বিয়ের পর বিলকিস গিয়ে দেখতে পান বিউটি বেগম সুস্থ। একে একে দুটো সন্তান আসে বিলকিসের ঘরে। ছেলে মান্না আর মেয়ে লামিয়া। এক সময় বাচ্চু মিয়া চলে যান বিলকিসকে ফেলে। অনটনের মধ্যেও সন্তানদের লেখাপড়া করানোর ইচ্ছে ছিল বিলকিসের। মান্না পড়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত। অবশেষে তাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছে। লামিয়া এখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। তার লেখাপড়াও কতদূর যায়, কে জানে, রাস্তার পাশে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে থেকে বিলকিস টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সংসার।

কুকরী মুকরীর বাবুগঞ্জ লঞ্চঘাটে শিরিন আক্তারের বসবাস স্বামী আর দু’সন্তান নিয়ে। রাস্তার পাশে টং ঘর বানিয়ে একটি দোকান করেছেন। পাশের ছোট্ট ঘরটিতে বসবাস। স্বামী জয়নাল আবেদীন দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। শিরিনকে এখন শুধু সংসারের বোঝাই বইতে হচ্ছে না, স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে। সারাদিন দোকানে বসে বেচাকেনা, চা বানানোর কাজ। পাশাপাশি সুযোগ বুঝে রান্না-বান্নার কাজটিও সেরে ফেলেন। 

দুঃস্থ এই নারীদের সংসার চালিয়ে নিতে সরকারি সাহায্য থাকলেও তা পাওয়ার সৌভাগ্য হাতে গোনা কয়েক জনের হয়। 

কুকরী মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, উপকূল অঞ্চলের নারীদের মধ্যে যারা পরিবারের প্রধান, তাদের অনেকেই দুঃস্থ, অসহায়। এদের জন্য সরকারি বেসরকারি কিছু প্রকল্প থাকলেও তা একেবারেই অপ্রতুল। সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে এবং এদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে এদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটতে পারে।

AHA/FI
আরও পড়ুন