স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার প্রত্যাশা সবার

পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। মহাসড়কগুলোর প্রশস্তকরণ, মহাসড়কের জনসমাগম স্থলগুলোতে উড়াল সেতু নির্মাণ এবং ঈদকে কেন্দ্র করে সার্বক্ষণিক তদারকির ফলে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করছে সরকার।

সড়ক যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ঈদুল আজহায় যাত্রীদের স্বস্তিদায়ক যাত্রার প্রত্যাশার বিষয়টি দৈনিক খবর সংযোগকে জানিয়েছেন।

পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে মানুষ ঢাকা থেকে গ্রাম অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছেন। প্রিয়জনদের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে তাদের এই যাতায়াতে যাতে কোন ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সেজন্যে বাস, ট্রেন, বিমান, লঞ্চ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আগে ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল নদী পথ।  লঞ্চে যাতায়াত করতে গিয়ে নদীপথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতো। কিন্তু পদ্মা সেতু  হওয়ায় নদীর বুকে মানুষের সেই করুণ মৃত্যুর মিছিল থেমেছে। এছাড়া দক্ষিণ বঙ্গে যাতায়াত করতে পূর্বে যেখানে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লাগতো এখন সেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় যাতায়াত করা যায়।

পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াতে গতি পেলেও নদী পথের চাহিদা এখনো থামেনি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, এখনো দক্ষিণবঙ্গে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টি লঞ্চ যাতায়াত করে।

তবে পূর্বে লঞ্চের যাত্রীদের উন্নত সেবা দেয়ার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলেও এখন উন্নত সেবা দিয়ে যাত্রী টানার চেষ্টা করছে লঞ্চগুলো।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০টি লঞ্চ যাতায়াত করে। চাঁদপুর, ফরিদপুর ভোলা ও পটুয়াখালী অঞ্চলে লঞ্চের চাহিদা রয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে লঞ্চের যাত্রীদের স্বস্তিদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করতে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও লঞ্চের পরিষ্কার-পরিছন্নতার বিষয়গুলো আমরা দেখছি।

অন্যদিকে দেশের মহাসড়কগুলো অধিক প্রশস্তকরণ ও জনসমাগম স্থলে উড়াল সেতু নির্মাণ হওয়ায় এখন যাতায়াতে তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ ফিরেছে। যদিও উত্তরবঙ্গের মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও  উড়াল সেতু নির্মাণের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে।

এমতাবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা- সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ দেশের  মহাসড়কগুলোতে যাতে কোনোভাবেই যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে না হয় এবং যাত্রীরা স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্যে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশ প্রধান, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো.শাহাবুদ্দিন খান দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, অতীতের ন্যায় এবারও মহাসড়কে যাতায়াতের ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে  সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে যাত্রীদের যাতায়াতে কোন ধরনের সমস্যা না হয়। যাত্রীদের স্বস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে  হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, মেট্রো পলিটন পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ম্যাজিস্ট্রেট একযোগে কাজ করবেন। 

সাবধানে, সতর্কতার সাথে যাত্রীদের চলাফেরা করতে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচারণা থাকছে। মহাসড়কে গাড়ি বিকল হলে তা মেরামত করে সচল করার জন্য মেকার প্রস্তুত থাকবে। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সিসি ক্যামেরা এবং অফিসারদের শরীরে ভিডিও ক্যামেরা রয়েছে। এছাড়া ড্রোনের মাধ্যমেও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

আকাশ পথে যাত্রীদের ঈদযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে। বেসরকারি এয়ারলাইনস নভোএয়ারের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান মো. মেসবাউল ইসলাম দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে নভোএয়ারের অতিরিক্ত কোন ফ্লাইট যোগ হচ্ছে না। পূর্বে দিনে যে ১৫টি করে ফ্লাইট চলতো এখনো তাই থাকছে।

তিনি বলেন, জুনের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহী রোডের প্রায় ৮০ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে ফিরতি পথে কিছুটা হালকা রয়েছে। আর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রোডের টিকিট বিক্রয় স্বাভাবিক রয়েছে। 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বিমানের ৯০ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এবার ঈদের আগে ২০টি অতিরিক্ত ফ্লাইট ও ঈদ-পরর্তী সময়ের জন্যে ৯টি অতিরিক্ত ফ্লাইট যোগ করা হয়েছে।

পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ট্রেনের যাত্রীদের যাতায়াত যাতে স্বস্তিদায়ক হয় সে বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।  

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, রেলে যাতে মানুষ স্বস্তির সাথে উঠতে পারে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের ভিড় না বাড়ে সে জন্য পশ্চিম অঞ্চলের ট্রেনগুলো শহর তলীর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে।

ঢাকা থেকে যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে যাতে কোনো ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সেজন্যে ৩টি স্টেশন ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

শ্রমিক ভাই-বোনদের কথা চিন্তা করে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে স্পেশাল ট্রেন দেয়া হয়েছে। এক সিটের জন্য টিকিট কেটে অন্য সিটের বগিতে কেউ যাতে না যেতে পারে সেজন্যে আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। ট্রেনের ছাদে যাতে কোনভাবেই কেউ না উঠতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এবার বিষয়টি কঠোরভাবে তদারকির জন্য জনবল বাড়ানো হয়েছে। আমরা করছি ঈদের ট্রেন যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। ঈদে বাসের যাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে।