বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার এই সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এ ইস্যুতে ঢাকায় শনিবার (২৯ জুন) নয়াপল্টনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১লা জুলাই সারা দেশে মহানগরে ও ৩ জুলাই জেলা শহরে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে তারা।
জানা গেছে, সমাবেশে ঢাকা ও তার আশেপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, সাভার ও মানিকগঞ্জ থেকেও সংশ্লিষ্ট নেতাদের লোক সমাগম ঘটানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হওয়ার প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তিসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে সর্বশেষ গত ১০ মে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। তবে ওই সমাবেশে খুব কমসংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যানারে আগামীকাল ঢাকায় নির্বাচনের পর সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে চায় দলটি।
জানা যায়, ঢাকার এই সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। সমাবেশ বাস্তবায়নে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে প্রধান সমন্বয়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সহায়তা করার জন্য দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও সমাবেশ সফলে কাজ করছেন। সমাবেশে বড় ধরনের শোডাউন ঘটাতে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সমাবেশ সফলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে যৌথ সভা করেছেন। প্রস্তুতি সভা করেছে ছাত্রদল, বিলুপ্তকৃত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল। সমাবেশে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রস্তুতি সভা করেছে বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সমাবেশ সফলে দলের প্রতিটি নেতাকর্মী বদ্ধপরিকর। মহানগর উত্তর বিএনপির বিলুপ্তকৃত কমিটির পাশাপাশি অধীন থানা ও ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রস্তুতি চলছে। কর্মীসভাও করেছি। আমাদের প্রত্যাশা, খালেদা জিয়ার মুক্তির সমাবেশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যায় সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করবেন।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, সমাবেশ সফলে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি কর্মসভা করছি। আশা করছি, সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। ওই সময় আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী মানববন্ধন, অবস্থান, গণঅনশন, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ সমাবেশ, সমাবেশসহ নানান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। পরে করোনা মহামারিকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাময়িক স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। কারামুক্তির পর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকছেন শারীরিকভাবে অসুস্থ বিএনপি নেত্রী। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২১ জুন গভীর রাতে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়।